অস্ট্রিয়ায় আগামীকাল রোববার থেকে গ্রীষ্মকালীন সময় শুরু

অস্ট্রিয়া সহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশ আগামীকাল রোববার ২৭ মার্চ ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয় এক ঘন্টা এগিয়ে স্বাভাবিক গ্রীষ্মকালীন সময়ে ফিরে আসবে

 কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ আজ শনিবার ২৬ শে মার্চ দিবাগত রাত ২ টায় ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে রাত ৩ টা করা হবে।যার অর্থ দাঁড়ায় শনিবার দিবাগত রাতে এক ঘণ্টা কম ঘুমাতে হবে।গত অক্টোবর মাসের শেষ রোববার সূর্যের আলো বেশী পাওয়ার জন্য ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল,তা এখন আবার ফিরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হবে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার পূর্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশ সময়ের এই পরিবর্তন থেকে বেড়িয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিল কিন্ত মহামারীর জন্য তা বাস্তবায়ন স্থগিত হয়ে যায়।

ইউরোপে কেন এই সময়ের পরিবর্তন করা হয়ে থাকে এবং এর ইতিহাস কি?

আসলে সময়ের এই পরিবর্তন করা হয়ে থাকে দিবালোক বা সূর্যের আলো সংরক্ষণ বা বেশী পাওয়ার জন্য। দিবালোক সংরক্ষণ সময় বা ডেইলাইট সেইভিং টাইম (ইংরেজি: Daylight Saving Time), সংক্ষেপে ডিএসটি (DST) হলো ঘড়ির সময় ১ ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়ার একটি রীতি, যাতে ঘড়ির কাটার হিসাবে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই এক ঘণ্টা পরে ঘটে এবং বিকেলের ভাগে একটু অতিরিক্ত সময় সূর্যালোক পাওয়ার সুযোগ তৈরী হয়। সাধারণত এই রীতিতে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বসন্তকালে ঘড়ির কাঁটা ১ ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হয় এবং শরতে আবার তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়।

১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার অমর বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন তার একটি খামখেয়ালিপূর্ণ প্রবন্ধে প্রথম এই নাটকীয় ব্যবস্থার ধারণা তুলে ধরেন। পরবর্তিতে তার এই ধারণাটি প্রথম ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরেন উইলিয়াম উইলেট নামের একজন ব্রিটিশ নির্মাতা ওয়েস্ট অফ ডেলাইট নামক একটি প্যামপ্লেটে।

যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এই দিবালোক সংরক্ষণ (ডিএসটি) ব্যবহৃত হয় না, কিন্তু উত্তর অক্ষাংশের উচ্চ অক্ষাংশের দেশগুলোতে দিবালোক সংরক্ষণ সময় একটি সাধারণ বিষয় হিসাবে চলে আসছে। যদিও করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুরুর পূর্বে অস্ট্রিয়া সহ অনেক ইউরোপীয় দেশ সময়ের এই পরিবর্তন থেকে বের হয়ে আসতে একমত হয়েছিল।কিন্ত মহামারী করোনার জন্য সমস্ত পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়।

মধ্য ইউরোপে যখন দিবালোক সংরক্ষণ (ডিএসটি) চালু হয়, ঘড়িকে মধ্য ইউরোপীয় সময় (CET) রাত ২টা থেকে মধ্য ইউরোপীয় গ্রীষ্মকালীন সময় (CEST) রাত ৩টায় এগিয়ে নেওয়া হয়। মধ্য ইউরোপে যখন দিবালোক সংরক্ষণ(ডিএসটি)শেষ হয়, অর্থাৎ অক্টোবর মাসের শেষ রোববার ঘড়ির সময়কে রাত ৩টা সিইএসটি থেকে রাত ২টা সিইটি-তে পিছিয়ে নেয়া হয়।অন্যান্য অঞ্চল বিভিন্ন সময়ে বদলে নেয়। দিবালোক সংরক্ষণ সময় সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

১৯৭৩ সালে আরব বিশ্বের সাথে জ্বালানি তেল নিয়ে পাশ্চাত্যের দেশ সমূহের সাথে এক দ্বন্দ্বের পর জ্বালানী খরচ কমানোর জন্য ইউরোপে এই পদ্ধতির প্রয়োগে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গিয়েছিল।কোনো কোনো অঞ্চল পরবর্তীতে প্রকৃত সময়ে ফিরে এলেও এখনও অনেক দেশ এই পদ্ধতির ব্যবহার করে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস একটি আইন পাশ করে, যাতে পুরো দেশকে “রণ সময়”-এর অধীন করে নেয়া হয়, যাতে পুরো যুদ্ধকালীন সময়টায় দেশের সময়কে একঘণ্টা এগিয়ে নেয়া হয়। এই দিবালোক সংরক্ষণের ধারাবাহিকতার পদ্ধতিটি যুক্তরাজ্যও (গ্রেট ব্রিটেন) অনুসরণ করে, যেখানে গ্রীষ্মকালীন সময়ে স্বাভাবিক সময় থেকে সময়কে আরো এক ঘণ্টা (অর্থাৎ ২ ঘণ্টা) এগিয়ে নেয়া হয়।পরবর্তিতে শীতকালীন সময়ের সময় একটি বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়। 

যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই দিবালোক সংরক্ষণ (ডিএসটি) অনুসরণ করে আসছে তাদের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। বিতর্কিত ও ঝামেলাপূর্ণ এই পদ্ধতিটির বিতর্ক অবসানের জন্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং অধীন রাজ্যগুলোর মধ্যকার ঝামেলা দূর করতে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ‘ইউনিফর্ম টাইম এ্যাক্ট’ পাশ করে। এই বিধান অনুসারে সকল অঙ্গরাজ্যের জন্য কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিএসটি অনুসরণ করা হবে। তবে শুধুমাত্র সেই অঞ্চলটি বা রাজ্যটি এর আওতামুক্ত থাকবে, যেখানে রাজ্যটির আইনগত কিংবা রাজনৈতিক পরিচালক তা ব্যবহারে অসম্মতি জানাবেন।যাবতীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দিবালোক সংরক্ষণ সময় শুরু হয় এপ্রিল মাসের প্রথম রবিবার রাত ২টায় এবং শেষ হয় অক্টোবর মাসের শেষ রবিবার রাত ২টায়।

বাংলাদেশেও এই দিবালোক সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছিল কিন্ত সফল না হওয়ায় তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।২০০৯ সালের ২০ জুন থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত দিবালোক সংরক্ষণ বা দিনের আলোর সংরক্ষণ (ডিএসটি) ব্যবহৃত হয়।কিন্তু এই নিয়ম দেশটিতে জনপ্রিয় হয়নি এবং পরবর্তিতে সরকার তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়।ভবিষ্যতে আর কখনও দেশটিতে ডিএসটি প্রবর্তন করা হবে না বলে সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *