করোনা মোকাবিলা প্রসঙ্গে দাবি উত্থাপন করতে ভার্চুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠিত


হাফিজা লাকী, ঢাকা প্রতিনিধিঃ
ওয়েবিনারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, মনোবিদ, আইন বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবি, নারী সংগঠক, মানবাধিকার কর্মী, প্রবাসী নাগরিক সহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা যুক্ত হন।

এবি পার্টির আহ্বায়ক সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার।

সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, রাজনীতিক ও অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি, গণফোরাম নেতা সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মহসীন রশিদ ও এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু।

ড. মোজাহেরুল হক বলেন, কোভিডের ইন্ডিয়ান ভ্যারাইটি আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি আতংকের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কোভিড নিয়ন্ত্রণের একটি বৈজ্ঞানিক উপায় ছিলো লকডাউন, কিন্তু আমাদের দেশে যে লকডাউন চলছে তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। লকডাউন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে না পারা। এই ধরনের মহামারী থেকে রক্ষা পেতে প্রথম প্রধান কাজ ছিলো জনগনকে সচেতন করা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী তাদেরকে সম্পৃক্ত করা। কিন্তু সরকারের একগুঁয়েমি ও গোয়ার্তুমির জন্য করোনা প্রতিরোধক সকল কার্যক্রমে জনসাধারণ সম্পৃক্ত হয়নি। এখন একটিই উপায় রয়েছে বয়স ও ঝুকিপূর্ণ পেশা বিবেচনায় সকলকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, লকডাউনের নামে যে অব্যবস্থাপনা সরকার করেছে, একবার গাড়ি বন্ধ একবার খোলা। শ্রমিকরা ঈদে বাড়ি গেলো তারা আসবে কিভাবে। হঠাত গাড়ি বন্ধ রেখে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ডাকা চরম অমানবিক। এই লকডাউন করোনা কমানো বাদে তা বৃদ্ধিতেই ভূমিকা রাখছে। কাজেই এখনি সকলকে টিকার আওতায় আনার দাবী আমাদের জোরালো করতে হবে।টিকা নিয়েও সরকার নানান টালবাহানা করছে, রাশিয়া ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে স্বল্প ব্যয়ে টিকা দিতে আগ্রহী হয়েছিলো কিন্তু সরকারের টালবাহানায় সেটাও পাওয়া সম্ভব নয়।

ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, এই সরকার গড ফাদার আনুকুল্যের সরকার। বৈষম্যের চরম অবস্থা তারা সৃষ্টি করেছে। দেশের অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে সর্বপ্রথম উচিত ছিলো শ্রমজীবী মানুষদের টিকার আওতায় আনা এবং কর্মজীবী মানুষদের দু’বেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্সদের ঝুঁকি ভাতার আওতায় নিয়ে আসা। তিনি আরো বলেন, টিকা সরবরাহে সরকার একটি দেশের উপর নির্ভরশীল না হয়ে কোন কোম্পানির কমিশনের দিকে না তাকিয়ে যদি জনগণের দিকে তাকাতো তাহলে আরো অনেক বেশি টিকা সাশ্রয়ী মুল্যে সংগ্রহ করে জনসাধারণকে দেয়া যেতো। ব্যক্তি বিশেষের অর্থলোভ জনসাধারণের আজকের এই চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এডভোকেট মহসিন রশিদ বলেন, কোভিড নিয়ে জনগণকে সরকার সচেতন করতে পারেনি, লকডাউনও ব্যর্থ হয়েছে। এই সময়ে এসে লকডাউন আর কার্যকর হবেনা। এখন সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, টিকার কোন বিকল্প নাই, ধারাবাহিকভাবে ঝুকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত, বয়স ইত্যাদি বিবেচনায় অতিদ্রুত সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন কয়েক বছর লাগবে কোভিড থেকে স্বাভাবিক হতে। কাজেই আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাবী জানিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে সবাইকে টিকার আওতায় আনার জন্য।

সভাপতির বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দেশে এক করুন অবস্থা বিরাজ করছে। অব্যবস্থাপনার কারনে করোনা নিয়ন্ত্রণ আরো ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা দেশের কৃষক, শ্রমিক, ডাক্তার, আইনজীবী সহ সকল নাগরিককে টিকার আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি। সরকার সঠিক ভাবে আগালে আমরাও সেচ্ছাসেবীর মতো দেশের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো।

 14,645 total views,  1 views today