বাংলাদেশে গত তিন সপ্তাহে চলে গেলেন ১৯ জন চিকিৎসক

   কবির আহমেদ, বাংলাদেশ ডেস্কঃ বৈশ্বিক মহামারী করোনাসহ অন্যান্য রোগে গত ২১ দিনে দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৯ জন চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন।

বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) এক পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সর্বশেষ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) ‍দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, ছাত্র-ছাত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এ ছাড়া গত ২১ দিনে যেসব চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন তারা হলেন: প্রবীণ চিকিৎসক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সিরাজুল ইসলাম, ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশের (সিবিএমসিবি) চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. ফরিদা ইয়াসমিন, গ্রীণ লাইফ মেডিকেল কলেজের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ডা. এম এ মোহায়মেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) লালমনিরহাট জেলা শাখার আজীবন সদস্য ডা. মো. তওহীদ হাসান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ, বরিশাল জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এএফএম শফিউদ্দিন পাতা, টাঙ্গাইল জেলা টাঙ্গাইল জেলার শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের স্ত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. জাকিয়া রশিদ শাফি এবং গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল ও গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নাজিব মোহাম্মদ।

এছাড়া মৃত্যুবরণ করেছেন, বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. ফাতিমা তুজ জোহরা দিশা, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ২৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. আতিক উল্লাহ লেনিন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) বগুড়া শাখার আজীবন সদস্য প্রবীণ চিকিৎসক আলহাজ্ব ডা. মো. ফজলুর রহমান, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সালাম সেলিম, সাতক্ষীরা জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সালেহ আহমেদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সন্দীপন দাশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর ডা. মেহেদী হাসান রবিন, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অমিত কুমার রায়, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. এইচ এম আওলাদ হোসেন, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. গোলাম মোস্তফা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসটিসি) মেডিকেল কলেজ ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. শাহরিয়ার।

বিএমএ জানিয়েছে, শুধু করোনায় দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮১ জন চিকিৎসক ও তিন ডেন্টাল সার্জন। এছাড়া করোনাভাইরাসের সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১০৩ জন চিকিৎসক ও ২ হাজার ২৬৭ জন নার্স।

সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, জেলাভিত্তিক হিসেবে ঢাকা জেলায় চিকিৎসকরা সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছেন। এ জেলায় মোট ৮৬২ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর চট্টগ্রাম জেলায় ৪৯২ জন, সিলেট জেলায় ৩৪৯ জন, কুমিল্লা জেলায় ১৩১ জন, ময়মনসিংহ জেলায় ১৪৩ জন। পিরোজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় এ তিন জেলায় সবচেয়ে কম চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী  করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং অনুযায়ী ২০ আগস্ট শুক্রবার দেশে করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৫,৯৯৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪৫ জন।

 14,623 total views,  1 views today