আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

কবির আহমেদ,বাংলাদেশ ডেস্কঃ ১৯৭৮ সালের আজকের এই দিনে তৎকালীন রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতা বলয়ের মধ্য থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধান সামরিক শাসক ও সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তার সামরিক শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি শুরু করেন। জিয়া যখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি রাষ্ট্রপতির পদের জন্য নির্বাচন করবেন তখন তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসলে জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গঠন করেন। পরে জাগদলকে বিএনপির সাথে একীভূত করা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। জিয়ার এই দলে বাম, ডান, মধ্যপন্থি সকল প্রকার লোক ছিলেন। বিএনপির সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর নিয়োগ পদ্ধতি। প্রায় ৪৫ শতাংশ সদস্য শুধুমাত্র রাজনীতিতে যে নতুন ছিলেন তাই নয়, তারা ছিলেন তরুণ।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সাংবাদিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সেই সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
এখানে উল্লেখ্য, বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন জিয়াউর রহমান। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে জিয়া পর্বের সমাপ্তি ঘটে। কিছু দিনের মধ্যেই দলের হাল ধরেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিএনপির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন তিনি।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৯, ১৯৯১, ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। ১৯৯৬ সালে ১৫ অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনেও বিজয়ী হয় দলটি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি।
আর ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংসদের বাইরে রয়েছে দলটি। এই মুহূর্তে দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রয়েছেন তার গুলশানের বাসভবনে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় তিনি বাসভবনে থাকলেও অনেকেই গৃহবন্দী অবস্থাতেই আছেন। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন লন্ডনে নির্বাসনে।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে বলেছেন, ‘আজ থেকে ৪৩ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ্বনন্দিত নেতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশ, দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান দু:সময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোন বিকল্প নেই। দেশ আজ দু:শাসন কবলিত। মানুষ ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টায় মরিয়া। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন-খারাবী, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে হবে উল্লেখ করি ফখরুল বলেন, ‘তিনি প্রতিহিংসার শিকার। কারণ, তিনিই গণতন্ত্রের প্রতীক এবং জনগণের নাগরিক ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে প্রধান কন্ঠস্বর।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার ৩১ আগস্ট দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
৪৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বেলা ১২টা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে শহীদ জিয়ার মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, হেল্প ক্যাম্প ও করোনা রোগীদের সহায়তা প্রদান, দেশব্যাপী পোস্টার এবং ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে একইভাবে আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
14,621 total views, 1 views today