করোনার ওমিক্রোন ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যুহার কম এ কথা সত্য নয় – বিএসএমএমইউ,ভিসি

দেশে ওমিক্রোন ভ্যারিয়েন্টের জন্য জারিকৃত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিধিনিষেধ না মানলে জেল ও জরিমানার হুমকি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের।

 কবির আহমেদ,বাংলাদেশ ডেস্কঃ গতকাল মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন,বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নাই।

তাছাড়াও বৈশ্বিক মহামারী করোনার নতুন ধরন ওমিক্রোনে মৃত্যুর হার কম, এ কথা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ওমিক্রোন সংক্রমণ হার অনান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে কয়েকগুণ বেশি। তবে ভয় না পেয়ে সচেতন ও সতর্ক হয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে হবে।

এজন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, টিকাও নিতে হবে। সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধও মেনে চলতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। নাক মুখ ঢাকা মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অবশ্যই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আর টিকা নিলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ছাড়াও টিকা নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হলে রোগীর জটিলতা কম থাকে এবং মৃত্যু ঝুঁকিও কম থাকে।’

অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওমিক্রোনকে হালকা বা মৃদু হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। ওমিক্রোনে মৃত্যুহার কম একথাও সত্য নয়। যারা ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বা হার্ট, কিডনি, লিভারে সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ওমিক্রোন অবশ্যই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা মৃত্যুঝুঁকি আছে এমন রোগে অর্থাৎ কো মরবিডিটিতে ভুগছেন তাদেরকে অধিকমাত্রায় সতর্ক হতে হবে। বেশি বয়স্কদের যতটা সম্ভব বাইরে না যাওয়াই ভালো এবং ভীড় এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে বের হলে অবশ্যই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অনলাইন অফিস ও  অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম আবারো জোরদার করতে হবে।  তিনি আরো বলেন, ওমিক্রোন প্রতিরোধে এখনই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে, সাথে সাথে করোনার সংক্রমণ আরো বৃদ্ধি পেলে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্যও এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।’

এদিকে দেশে ওমিক্রোন ভ্যারিয়েন্টের জন্য জারিকৃত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিধিনিষেধ না মানলে জেল ও জরিমানার হুমকি দিয়েছেন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

আজ বুধবার (১২ জানুয়ারি) মহাখালী বিসিপিএস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘koikas’s covid-19 support’ এর আওতায় প্রাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স এবং এমআইএস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কম্পিউটার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এই জেল ও জরিমানার হুমকির কথা জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আগামীকাল থেকে বিধি-নিষেধ কার্যকর হবে।স্বাস্থ্য বিধি না মানলে জেল-জরিমানা সম্মুখীন হতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা যেভাবে বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।তাই সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি প্রতি-পালনে আন্তরিক হতে হবে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এক তথ্যে জানা গেছে দেশে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়েছে শতকরা ১৬৯ শতাংশ।কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।

আজ বুধবার (১২জানুয়ারি) দুপুরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৯ জন লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মহাদেশে দেখা যাচ্ছে বর্তমান সময়ে সব চেয়ে বেশি শনাক্ত হচ্ছে। ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেলটা ভাইরাস দুটিই কিন্তু অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট তারই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গত ১ সপ্তাহে বাংলাদেশে ১০ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। ৭ দিনে দেড় লাখ টেস্ট হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৪৭৪ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭ দিনে ৬ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। ১৬৯ দশমিক ১২ শতাংশ আগের সপ্তাহের তুলনায় পরের সপ্তাহে রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮৯ জন। গত ৭ দিনে ২০ জনের মৃত্যু দেখেছি করোনায়। যদিও আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মৃত্যু ২০ শতাংশ কম।

অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, গত ৫ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা প্রায় দ্বিগুণ শতাংশ রোগী পেয়েছি। ৫ জানুয়ারি ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ১১ জানুয়ারি এসে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে। গত ৭ দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সংক্রমণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারপর থেকে এটা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা শুধুমাত্র একই ধারায় বৃদ্ধি হচ্ছে তা না, প্রোগ্রেসিভলি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য অ্যালার্মিং। পুরো ডিসেম্বরে ৪ হাজার ৫৮৮ রোগী আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি, সেখানে জানুয়ারির মাত্র ১১ দিনে ১২ হাজার ৮৫০টি রোগী ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। অনেকেই টেস্ট করছেন না। সবাই যদি টেস্ট করতেন এবং সংক্রমিত যেসব সিম্পটোমিক যেসব রোগী আছেন তাদের সবাইকে টেস্ট করলে হয়তো সংখ্যাটা আরও অনেক বৃদ্ধি পেত।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা এবং রাঙ্গামাটি বর্তমানে কোভিডের অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।এ ছাড়া, ৫৪টি এলাকাকে কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।কম থেকে মধ্যম ঝুঁকিতে আছে সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটা জেলা। যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নাটোর ও রংপুর।এসব জেলাগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে তাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

 14,592 total views,  1 views today