বাংলাদেশে করোনার ওমিক্রোনের সংক্রমণ বাড়ায় ৩০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন

কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনের জন্য সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ১২ জেলা বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে শীঘ্রই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩০ দিন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
আজ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) জনস্বার্থে এই আবেদন করেন তিনি। এতে স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।ইউনুছ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।’
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে ভার্চুয়ালি চলছে সুপ্রিম কোর্ট।সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়ালি শুরু হয়েছে।
এদিকে গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে আজ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানান করোনার সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ১২টি জেলা।
ঢাকা ও রাঙ্গামাটি জেলার পর আরও ১০ জেলাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে ৩২ জেলা। আর ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে ১৬ জেলা।
দেশের উচ্চ বুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, লালমনরিহাট, খাগড়াছড়ি ও পঞ্চগড়। আগের দুটি ঢাকা ও রাঙ্গামাটি। এ জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার অন্তত ১০ শতাংশ।
মধ্যম ঝুঁকিতে থাকা ৩২ জেলার শনাক্তের হার অন্তত ৫ শতাংশ। জেলাগুলো হলো সিলেট, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, শেরপুর, ঝালকাঠি ও ঠাকুরগাঁও।

এ ছাড়া এখনও করোনা থেকে ঝুঁকিমুক্ত আছে ১৬ জেলা। এই জেলাগুলোতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে।ঝুঁকিমুক্ত জেলাগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও মেহেরপুর।
ইতিপূর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছেন,বর্তমান চলমান করোনার নতুন সংক্রমণের বিস্তারের জন্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনেকেই দায়ী করা হচ্ছে। দেশে গত এক মাসে সংক্রমণের শতকরা ২০ শতাংশের উপরে মানুষ এই ওমিক্রোন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।
চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী বর্তমানে ওমিক্রোনে আক্রান্তদের মধ্যে যে সমস্ত উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সর্দি ও হাঁচি-কাশি,গলা ব্যথা ও ক্লান্তিবোধ।গতকাল দেশে একদিনেই সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ৮,৪০৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ জন।দেশে করোনার দৈনিক সংক্রমণ আরও অনেক বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে আজ বুধবার (১৯ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে দেশে গত ২৪ ঘন্টায় দেশে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছে ৯,৫০০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১২ জন।সংক্রমণের শতকরা হার ২৫.১১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণহারানো ১২ জনের মধ্যে ১০ জন পুরুষ এবং দুইজন নারী। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে আটজন এবং বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা গেছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ৮৫৫টি পরীক্ষাগারে ৩৭ হাজার ৫৭৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয় ৩৭ হাজার ৮৩০টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল এক কোটি ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৮৯টি।
এ সময় সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪৭৩ জন। এ নিয়ে দেশে সুস্থ হয়েছেন মোট ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৮ জন রোগী।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭২ ভাগ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক ৬৪ ভাগ। আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭২ ভাগ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয় ওই বছরের ১৮ মার্চ। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় ২৮ হাজার ১৭৬ জন মানুষ মারা গেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ১৬ জন (৬৩ দশমিক ৯৪ ভাগ) ও নারী ১০ হাজার ১৬০ জন (৩৬ দশমিক শূন্য ছয় ভাগ)।
14,804 total views, 1 views today