সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ইন্তেকাল

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  কবির আহমেদ, বাংলাদেশ ডেস্কঃ সাবেক অর্থমন্ত্রী, খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং ভাষাসৈনিক সিলেটের কৃতি সন্তান আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।

শুক্রবার(২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২:৫৬ মিনিটে তিনি রাজধানীর একটি বে-সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে
তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভাগনি জামাই ড. আহমেদ আল কবির। তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের শাসনামলে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক পৃথক বার্তায় তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তারা মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিও গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

এছাড়াও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা এবং সকাল সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১২টায় তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহিদ মিনারে নেয়া হবে। এরপর দাফনের জন্য সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর মরদেহ সিলেটে নেয়া হবে। এর আগে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০২১ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

মরহুম আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ও বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ। মা-বাবা দুইজনই তৎকালীন সিলেট জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে তার অবস্থান তৃতীয়। বর্তমানে দায়িত্বরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আবদুল মোমেন সদ্য প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঐ বিষয়ে প্রথম শ্রেণী পেয়ে কৃতকার্য হন এবং একই বিষয়ে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বিদেশে চাকুরীরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তিনি। অতঃপর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রী লাভ করেন।

পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হিসেবে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে যোগদান করেছিলেন। চাকুরীরত অবস্থায় পাকিস্তান কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ও উপ-সচিব ছিলেন। ঐ সময় তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন ও পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসে পেশ করেন।

পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও, ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিত। বাংলাদেশ থেকে এসকাপের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে দায়িত্বপালন করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:

ওয়াশিংটনে তৎকালীন পাকিস্তানের দূতাবাসে প্রথম কূটনীতিবিদ হিসেবে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে নিজ অবস্থান তুলে ধরে চাকুরী থেকে ইস্তফা প্রদান করেন মুহিত। পরে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়াশিংটন দূতাবাসে ইকনমিক কাউন্সেলরের দায়িত্ব পালেন করেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক ছিলেন। তার স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের সংসারে দুই পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে। সামিয়া মুহিত একজন ব্যাংকার এবং মুদ্রা নীতি খাতের একজন বিশেষজ্ঞ। তাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহেদ মুহিত একজন বাস্তুকলাবিদ এবং কনিষ্ঠ পুত্র সামির মুহিত একজন শিক্ষক।

এছাড়া আবুল মাল আবদুল মুহিতের অন্যতম পরিচয় হচ্ছে তিনি একজন লেখকও বটে। স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘স্মৃতি অম্লান ১৯৭১’-সহ এ পর্যন্ত তিনি ২১টি পুস্তক রচনা করেছেন। পুস্তকগুলোর বিষয়বস্তু মূলতঃ প্রশাসন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কীয়।

 14,644 total views,  1 views today