করোনাভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

  নুরুল আমিন, ইউরো সমাচার প্রতিবেদকঃ এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধ বা নির্মূল করার মতো কোন টিকা বা ভ্যাক্সিন বা কোন ঔষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এতে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। যে কোন বয়সের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তি বা প্রাণীর সংস্পর্শে যে আসবে, সেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া হাঁচি-কাশি, বাতাস ও পানির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। এমনকি ভাইরাস আছে এমন কিছু স্পর্শ করলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। এতে সংক্রমণ ও বিস্তার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ল্যাটিন শব্দ করোনা থেকে ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়েছে। যার অর্থ মুকুট। ইলেক্ট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে এটি দেখতে অনেকটা মুকুটের মতো। এর উপরিভাগে প্রোটিন সমৃদ্ধ। এই প্রোটিন আক্রান্ত হওয়া টিস্যু নষ্ট করে দেয়। এতে অল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যায়। কয়েক প্রজাতির করোনাভাইরাস রয়েছে।

১৯৬০-এর দশকে প্রথম করোনাভাইরাস আবিষ্কৃত হয়েছিল। যা মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে দেখা যায়। পরে মানুষের মধ্যে পাওয়া যায় মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই এবং মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি-৪৩ নামে দুটি করোনাভাইরাস। সাধারণ সর্দিকাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই ভাইরাস দুটি পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরও কিছু প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। এগুলো হচ্ছে- ২০০৩ সালে এসএআরএস-সিওভি, ২০০৪ সালে এইচসিওভি এনএল-৬৩, ২০০৫ সালে এইচকেইউ-১, ২০১২ সালে এমইআরএস-সিওভি এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে চীনে মিলেছে নোভেল করোনাভাইরাস। এসব ভাইরাসের মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসকষ্টের গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয়। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপে দেখা দিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। যা অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলছে।

এটি এখন বিশ্ববাসীর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠেছে। সকলের ভেতর আতংক তৈরি হচ্ছে। দিন দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এতে বিশ্ব পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এর ভয়াবহ তান্ডবে বিশ্বের প্রবল পরাক্রমশালী শক্তিধর দেশগুলো পর্যন্ত নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে চীন থেকে শুরু হয়ে ইতালি, ইরান, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সৌদি আরব, ব্রিটেন, কোরিস্ত্রিয়া,ভারত,অষ্ট্রিয়া, কানাডা,  থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশসহ শতাধিক দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। এই ভাইরাসের ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অর্থনীতি, খেলাধুলা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। এতে বিভিন্ন দেশে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় না। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, অবসাদ, ঠান্ডা বা সর্দিকাশি, শুষ্ক কাশি, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপরোক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকে না। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। সংক্রমণের মারাত্মক পর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হতে পারে।বানলাদেশে  করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য ডিজিজ কন্ট্রোলরুম আইইডিসিআরের নম্বরে কল করতে হবে বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কল করার জন্য জরুরী একটি নম্বর ০১৯৩৭০০০০১১। নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করলেই হবে। এটি রোগীর শ্বাসতন্ত্রে সংক্রামিত হয় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির উৎপত্তি সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। তবে সাপ, বাদুড় বা অন্যকোন প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণের ১৪ দিনের মধ্যে রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাবে। তবে কোন কোন বিশেষজ্ঞ পাঁচ দিনের মধ্যে আবার কেউ কেউ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে বলছেন। করোনাভাইরাসের কোন ঔষুধ ও প্রতিষেধক না থাকায় পরিচর্যা, সতর্কতা ও সচেতনতাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। এরজন্য বিশ্বব্যাপী দেয়া হচ্ছে সতর্কবার্তা। প্রতিষেধক ও ঔষুধ তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, হাঁচি-কাশিতে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, বাইরে ঘোরাফেরা-ভ্রমণ, ভিড় জমানো, হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি, যেখানে-সেখানে থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে, সাবান ও পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধুতে হবে, জামাকাপড় পরিষ্কার করতে হবে, প্রত্যহ গোসল করার সময় সাবান ব্যবহার করতে হবে, অপরিষ্কার হাত দিয়ে নাক-মুখ ও চোখ স্পর্শ করা ঠিক হবে না, গরম পানি দিয়ে গড়গড়া কুলি করতে হবে, গরম পানি পান করতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, আইসক্রিম বা ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে, ঠাণ্ডা যাতে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, যতটা সম্ভব সূর্যের আলোতে থাকতে হবে, অসুস্থ পশুপাখি থেকে দূরে থাকতে হবে, মাছ-গোস্ত ভালভাবে ধুয়ে সিদ্ধ করতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে, কেউ আক্রান্ত হয়েছে এমন সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং রোগীকে হাসপাতালে বা ঘরে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। সাধারণত লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

সঠিক সময়ে সঠিক সেবা ও চিকিৎসা পেলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। প্রত্যেক মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এজন্য চিকিৎসকরা ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও জিংক জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগের নাম কোভিড-১৯। প্রত্যেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে, দৈনিক পাঁচবার ওযু করে নামাজ পড়লে করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ প্রতিহত করা সম্ভব। করোনাভাইরাসে আতংকিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া একান্ত জরুরী।                                               

বিদেশ থেকে যারা বাংলাদেশে আসছেন, তাদের কোয়ারান্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং তার শরীরে করোনাভাইরাস আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা নিয়েছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রোগ নির্ণয়, রোগীর চিকিৎসা ও পরিচর্যার জন্য আরও জোরালো পদক্ষেপ নেবেন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।               

লেখকঃ সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক, লালমোহন, ভোলা।

 2,294 total views,  1 views today

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *