ভয়ংকর করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মাঝেও চলছে খোলা খাবারের দোকান

সাব্বির আলম বাবু, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দেশব্যাপী ভয়ংকর ছোঁয়াচে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ আর পর্যাপ্ত কঠোর নজরদারী এবং যথাযথ আইন প্রয়োগের অভাবে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের আনাচকানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে খোলা খাবারের দোকান। সমগ্র বাংলাদেশে ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার হলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বিএসটিআইয়ের অভিযান কেবল শহর কেন্দ্রীক ও প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো সেটা পরিলক্ষিতই হয় না। অথচ দেখা যায় দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ গ্রামাঞ্চলে বাস করে। এই সকল জনগোষ্ঠী কৃষক-শ্রমিকের কাজ করে তারা সহজ-সরল-নিরক্ষর ও অসচেতন। নিম্নমান, ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খোলা খাবার তৈরী ও তাদের কাছে বিক্রি করে প্রতিনিয়তই প্রতারিত করা হচ্ছে।
জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক সরকারী স্যানিটারী ইন্সপেক্টর নামে থাকলেও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী করা এসব ভেজাল খাবার বিক্রি বন্ধ করার পর্যাপ্ত কোন কার্যকরী ভূমিকা তদের নিতে দেখা যায় না। যত্রতত্র খোলা খাবারের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য কখনো রাস্তার পাশে, কখনো স্কুলের পাশে, কখনো হাটবাজারে এসব ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে। কেউ কোন ধরনের বাধা বা প্রতিরোধ না করায় প্রবল উৎসাহে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় অনেক লোকজনই চা-নাস্তা-পান আর ফাস্টফুডের দোকান দিয়ে বসেছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ উপেক্ষা করে, সামাজিক দুরুত্ব বজায় না রেখে স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরা, মাঠের কৃষক, শ্রমিক আর পথচারীরা নির্বিচারে এসকল দোকানের খাবার কিনে খাচ্ছে। ফলে তারা ছোঁয়াচে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও গ্যাস্টিক, আলসার, ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা ইত্যাদির মতো নানা মারাত্মক রোগে ভূগছে।
এরকম খোলা খাবারের দোকানের মালিক নিরব জানান, আমি গরিব মানুষ আমার মূলধন কম। তাই পরিরারের ভরনপোষনের জন্য অল্প চালানে বেশী লাভের আশায় এই দোকান চালাই। তাছাড়া আমার দোকানে দৈনিক তিনজন কর্মচারী কাজ করে তাদেরও মুজুরী দেয়া লাগে। গ্রামের লোকজন সস্তায় খাবার খেতে চায়, তাই অল্প দামে মালামাল কিনে খাবার তৈরী করে। এসব খাবার খেয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি।
স্বাস্থ্য ও পুস্টিবিধদের মতে, খোলা খাবার খাওয়ায় উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি। পেটের পীড়ার নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও করোনা ভাইরাসের মহামারী দেখা দিতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর জানান, আমাদের সরকার নিয়োগ দিলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও নির্দিস্ট অফিস না দেয়ায় ও ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারনে স্বাধীন মতো দ্বায়িত্ব পালন করতে পারি না।
উল্লখিত সমস্যার প্রেক্ষিতে ও সার্বিক বিবেচনায় খোলা খাবারের দোকান ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি বন্ধ করার বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারী, প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংস্থার যৌথ ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পর্যাপ্ত ও জোরদার করার প্রয়োজন। পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহলের এই ব্যাপারে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে খোলা খাবার ও করোনা ভাইরাসের অপকারীতার বিষয়ে সচেতন করতে এবং প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে এগিয়ে আসতে হবে।
5,281 total views, 1 views today