আজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

 ঢাকা থে‌কে মোঃ সো‌য়েব মেজবাহউদ্দিনঃ আজ জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। করোনা বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মৃত‌্যুবা‌র্ষিকীর দিনটি পালনে জাতীয় পার্টি, এরশাদ ট্রাস্ট ও ব্যক্তিগতভাবে বেগম রওশন এরশাদসহ দেশব্যাপী নানান কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।                                      

সকালে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে রংপুরে এরশাদের সমাধি জিয়ারত করে দুপুরে ফিরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল ও বনানীর পৃথক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন জিএম কাদের। সকাল ১১টায় গুলশানের বাসায় রওশন এরশাদ মিলাদ মাহফিল ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে এরশাদ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সকাল ১২টায় কাকরাইলে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এরশাদের প্রতীকী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিকেলে প্রেসিডেন্ট পার্কে স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।                         

ট্রাস্টের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরের মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমানে দলের ৯০ শতাংশ নেতাকর্মীই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। করোনাভাইরাসের প্রভাব কেটে গেলেও তাদের অনেককেই আর দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যাবে না। বড় একটি অংশ দলছুটও হতে পারেন। নেতৃত্বের সংকটকেই বড় অভাব হিসেবে ধরা দিচ্ছে তাদের কাছে। তারা মনে করছেন, বর্তমান নেতৃত্বের হাত ধরে এই দলের নিজস্ব শক্তিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। জোটের ও ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই ফ্যাক্টর ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিভিন্ন আমলে সরকার গঠনে তার প্রতিষ্ঠিত দলকে রাজনীতির বাজারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন নিয়ামক হিসেবে। কিন্তু এরশাদের প্রয়াণে সেই জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আজ অনেকটাই ‘প্রভাবহীন’।                                                                                   

জানা যায়, বিগত এক বছর জাপা চলেছে এরশাদের অনুপস্থিতিতে। তবে এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় জাপার শীর্ষ নেতৃত্বে যে অনৈক্য ছিল, মৃত্যুর এক বছরের মাথায়ও তা অটুট রয়েছে।                                            

এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে তার পরিবার রংপুরে চলে আসেন। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ঐ বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। ১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেফতার হন। ১৯৯১ সালে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন। তিনি চলতি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।

 5,669 total views,  1 views today