বঙ্গোপসাগরে অব্যাহত দূষণ, কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসছে মৃত জলজ প্রাণী
রিপন শান,ব্যুরো চীফ বরিশালঃ সাগরকন্যা কুয়াকাটা । কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত । নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বঙ্গোপসাগরের নিবিড় আলিঙ্গনের মনোভূমি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশের আয় ও খ্যাতিবর্ধক অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ।
বৈশ্বিক মহামারী ও চলমান করোনাকালে এই কেন্দ্রের পর্যটনে সারা পৃথিবীর মতো ভাটা পড়লেও , আবার জাগবে প্রাণের জোয়ার- এই আশায় বুক বেঁধে আছে কতো মানুষ । কিন্তু হঠাৎ করে বিস্তৃর্ণ সমুদ্র সৈকতে একের পর এক মৃত জলজ প্রাণীর ভেসে আসার সংবাদ অনেককেই আহত করেছে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসছে মৃত জলজ প্রাণী। গত এক সপ্তাহে সৈকতের ১৮ কিলোমিটার এলাকায়ে ৫ থেকে ৬টি তিমি ও শুশুক মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।
বিশেষজ্ঞরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিদেশি জাহাজ থেকে নির্গত পোড়া তেলে সমুদ্রের পানির দূষণকে দায়ী করছেন। এদিকে সমুদ্র তীরে জলজ প্রাণী মরে পড়ে থাকলেও এর দায় নিতে চাচ্ছে না বনবিভাগ কিংবা মৎস্য বিভাগ।
জানতে চাইলে বনবিভাগের কুয়াকাটা সংলগ্ন গঙ্গামতি বিট কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনাস্থল গঙ্গামতি তেত্রিশ কানী এলাকার সাগরপাড়ে পরিদর্শন করে দেখে এসেছেন। সেখানে একটি তিমির অংশবিশেষ পড়ে আছে। তিনি বিষয়টি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তাকে জানানো হয়েছে যে এটি মৎস্য বিভাগ দেখবে। তাছাড়া তারা ঢাকায় বন্যপ্রাণি শাখাকে জানানোর চেষ্টা করবেন বলে জানিয়ছেন।
কুয়াকাটা স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত দুইদিনে কুয়াকাটা হোটেল সী ভিউ এবং হোটেল কিংস সংলগ্ন সুমদ্র সৈকতে দুইটি শুশুক মরে পড়েছিল। ঢেউয়ে তীরে এসে পড়ে আছে। পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এগুলো। গত সপ্তাহে গঙ্গামতি তেত্রিশ কানী এলাকা সংলগ্ন সাগর তীরে একটি তিমি ও দুইটি শুশুক মরে পড়েছিল।
সংশ্লিষ্ট এলাকার এক জেলে বলেন, রামনাবাদ চ্যানেলের নদীর সংযোগস্থল ও সমুদ্রের মোহনায় অবাধ বিচরণ করে তিমি, ডলফিন ও শুশুক। জেলেদের জালে আটকা পড়ে এগুলো মারা যেতে পারে। তাছাড়া সমুদ্রের এই পথ দিয়ে বিদেশি অনেক জাহাজ পায়রা বন্দরে যায়। ওইসব জাহাজের বর্জ্যের প্রভাবেও এগুলো মরতে পারে।
কুয়াকাটা মাঝধরা ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, অনেক সময় জালে এসব শুশুক তিমি আটকা পড়ে মারা যায়। এজন্য জিপিআরএস মেশিনে সমুদ্রের গভীরে দেখার জন্য আমাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরে নোঙর করা বড় জাহাজের চলাচলেও মরতে পারে বলে তার ধারণা। বরিশাল বিএম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরের জলজ প্রাণী সৈকতে মরে পড়ে থাকার অন্যতম কারণ সাগরে দূষণ। বিদেশি জাহাজের পোড়া মবিল বা তেল সাগরে ফেললে জলজ প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হয়।
এ প্রসঙ্গে বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জলজ প্রাণী সাগর তীরে পড়ে থাকার সংবাদ তারা পাননি। যদিও এটি তাদের বিষয় নয়। মৎস্য বিভাগ এটি দেখবে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আজিজুল হক বলেন, পানির মান খারাপ হলে জলজ প্রাণী মরতে পারে। তবে এ বিষয়টি বনবিভাগ দেখবে। তিনি পটুয়াখালী মৎস্য কর্মকর্তাকে ঘটনা খতিয়ে দেখতে অবহিত করবেন বলে গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করেন।
5,385 total views, 1 views today