প্রতারকদের শাস্তি নিশ্চিত হোক
নুরুল আমিন,প্রতিবেদকঃ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার যে, দেশে মহামারী করোনাকালে বিপন্ন মানুষকে জিম্মি করে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে প্রতারক চক্র। কেউ মানবিক সেবার নামে প্রতারণা করছে, কেউ ত্রাণ বরাদ্দ দেয়ার নামে আর কেউ রোগ পরীক্ষার নামে ভুয়া সনদ দিয়ে প্রতারণা করছে। আবার কেউ রোগীকে প্লাজমা দেয়ার নামে প্রতারণা করছে। রোগাক্রান্ত না হয়েও কিছু অসাধু ব্যক্তি রোগী সেজে প্রতারণা করছে। কেউ কেউ গুজব ছড়িয়ে প্রতারণা করছে। অনেকে অনলাইনে বেচাকেনায় নকল মাল দিয়ে এবং অনেকে করোনা প্রতিরোধে নকল সামগ্রী দিয়ে অবাধে মানুষ ঠকাচ্ছে। মানুষকে বোকা বানিয়ে মানুষের আবেগকে পুঁজি করে প্রতারকরা অভিনব কৌশলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
দিন দিন প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম বেড়ে চলেছে। দেশের আনাচে কানাচে দুর্নীতি, প্রতারণা, হয়রানি ও গুজবের সংস্কৃতি জালের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ ও জাতির শত্রু প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া একান্ত জরুরী। করোনা প্রতিরোধে সরকার যেসব মহতী উদ্যোগ নিয়েছে, তার সঠিক ও সুন্দর বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলার আকাশ থেকে দুর্যোগের ঘনঘটা ও হতাশার কালো মেঘ কেটে যেতো আশা করা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। প্রতারক চক্রের দুর্নীতির কারণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গৃহীত মহামারী করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার সব কর্মসূচি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। মানুষের দুর্ভোগ, দুর্দশা, হয়রানি ও ভোগান্তি ব্যাপকহারে বেড়েছে। প্রতারণা পূর্বেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। তবে যে কোনো সময়ের চেয়ে করোনাকালের প্রতারণা ও দুর্নীতি অত্যন্ত কষ্টকর বিষয়।
ডিএমপির তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতারণার অভিযোগ কম ছিল। করোনার সময়ে অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। ৯৯৯ সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের জুন মাসে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আসে ৪৪টি আর জুলাই মাসের প্রথম ১৬ দিনে ৩৬টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫১টি থানায় করোনাকালে দুই শতাধিক প্রতারণার মামলা হয়েছে। সারা দেশে এই সংখ্যা চার শতাধিক। প্রতারণার শিকার অনেকেই মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করে না। তাই প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রতারক ও দুর্নীতিবাজদের ধরেছে, কিন্তু প্রতারণা ও দুর্নীতি থামেনি। করোনাকালীন সময়ে মনুষ্যত্বহীন দুর্ধর্ষ প্রতারক যাদের ধরা হয়েছে। এর বাইরেও থাকতে পারে অর্থলোভী প্রভাবশালী ভয়ঙ্কর প্রতারক। সেই সব শক্তিধর প্রতারকদের ধরে আইনের আওতায় এনে বিচার করলে এবং শাস্তি দিলে প্রতারণা কমবে আশা করা যায়। রাঘব বোয়ালদের ধরতে না পারলে প্রতারণা ও দুর্নীতির মূলোৎপাটন আশা করা যায় না।
সাধারণ মানুষ অবশ্যই সচেতন হতে হবে, তাতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সতর্কতা, নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে জনগণের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা দূর হবে। প্রতারণা একটি জঘন্য অপরাধ। তাই ক্ষমা নয়। প্রতারকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, কবি ও প্রাবন্ধিক, লালমোহন, ভোলা। nurulamin911@gmail.com, 01759648626.
5,506 total views, 1 views today