ভোলা সহ দেশের সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের ঐতিহ্য মহিষের কাঁচা দই জৌলুশ হারাচ্ছে

 সাব্বির আলম বাবু,সমাচার প্রতিনিধিঃ  বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চল সহ সমগ্র ভোলা জেলায় বিভিন্ন এলাকায় কোন অনুষ্ঠানে আহারের শেষে মহিষের দুধের কাঁচা দই পরিবেশন করা ছাড়া যেন আপ্যায়ন পর্ব শেষই হয়না। এটা আপ্যায়ন প্রিয় ভোলাবাসীর চিরাচরিত রীতি। অপূর্ব স্বাদের এই দইয়ের প্রধান উৎপাদক ও যোগানদাতা সেই মহিষ তার মালিক, রাখাল, গোয়াল ঘরের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক সুখ-দুঃখের অজানা ইতিকথা। দ্বীপ জেলা ভোলার আশে পাশে উত্তাল নদীর মাঝে জেগে ওঠা নতুন চরের বুক জুড়ে তাজা সবুজ ঘাসের সমারোহ আর তার মাঝে মূখ ডুবিয়ে দিন রাত চড়ে বেড়ায় শত শত মহিষের পাল। এই মহিষের দুধের থেকেই তৈরী দইয়ের বাজার চাহিদা ব্যাপক। তাছাড়া মহিষের মাংশ ও দক্ষিনাঞ্চলে অনেক জনপ্রিয়।                                     

তবে সরেজমিনে গিয়ে মহিষের খামারের মালিকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, খামার চালাতে কিছু সমস্যা আছে তাদের। এগুলো সমাধান করলে দই ও মাংশের উৎপাদন আরো বাড়বে। যেমন- পশু চিকিৎসক ও ঔষধের অপর্যাপ্ততা। আরো আছে প্রকৃতিক দূর্যোগ, সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার সহায়তার অভাব পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজির দৌরাত্ম সহ জনমানবহীন চরাঞ্চলে রাখালদের মানবেতর জীবন যাপন। দই ব্যাবসায়ী রিয়াজ জানান, মহিষ মালিকদের কোন সমবায় সমিতি নেই, কোন আর্থিক ঋনের সুযোগও নেই। যা দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে খামারের আরো উন্নয়ন করা সম্ভব। তার উপর চরাঞ্চল দখল করছে নদীভাঙ্গন কবলীত মানুষেরা। ফলে মহিষের বিচরন ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। কমছে দুধের উৎপাদনও। এই সুযোগে অনেক অসাধু ব্যাবসায়ীরা দুধে ভেজাল মেশাচ্ছে যার কারনে ক্রেতারা ঠকছে দই কিনতে গিয়ে।                                                                                             

ভোলা পশু সম্পদ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ভোলাতে প্রায় ২০/২২ হাজার মহিষ আছে। এগুলো থেকে দৈনিক প্রায় ২০০ মন দুধ পাওয়া যায়। অথচ ভোলা পশু সম্পদ রক্ষায় পর্যাপ্ত কোন ব্যবস্তা নেই। ভোলার ইলিশা, ভেলুমিয়া, চরকচুয়া, চর জহিরুদ্দীন, মাঝের চর, মদনপুর, ঢালচর, চর কুকরী-মুকরী, চর মনপুরা, নেয়ামতপুর, আইচা, বঙ্গের চর সহ বিভিন্ন চরাঞ্চল মহিষের বিচরন ক্ষেত্র ও দুধের উৎপাদনের জন্য উল্লেখযোগ্য। একাধিক দই ব্যাবসায়ী জানান, অন্যান্য গবাদি পশুর মতো মহিষকেও আরো অর্থকরী করে তুলতে পশুসম্পদ মন্ত্রনালয়, কৃষি ব্যাংক, সমবায় অধিদপ্তর সহ সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সমবায়ের ভিত্তিতে মহিষ পালন, তাদের প্রটেকশন ট্রান্সপোর্ট সুবিধা, জমি লিজ দেয়া, চোর-ডাকাত-চাঁদাবাজির দৌরাত্ম বন্ধ করা সহ বহুমূখী নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই ভোলা সহ দক্ষিনাঞ্চলের এতিহ্য মহিষের কাঁচা দই ফিরে পাবে তার হারানো জৌলুশ।

 9,454 total views,  1 views today