টোকিওর গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকে বর্ষা নিক্ষেপে ভারতের স্বর্ণ পদক লাভ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বর্ণ বিজয়ী নীরজ চোপড়াকে ভিডিও কলের মাধ্যমে অভিনন্দন জ্ঞাপন
কবির আহমেদ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ অবশেষে টোকিওর গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকের শেষে এসে ভারত বর্ষা নিক্ষেপে প্রথম হয়ে স্বর্ণ পদক লাভ করেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছেন, অ্যাথলেটিক্সে প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদকের জন্য ভারতের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটেছে শনিবার, যখন একজন কৃষকের ছেলে নীরজ চোপড়া টোকিও গেমসে পুরুষদের জ্যাভেলিনে (বর্ষা নিক্ষেপ) প্রথম হয়ে স্বর্ণ জিতলেন।
নীরজ চোপড়া ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের এক কৃষক পরিবারের সন্তান। ২৪ বছর বয়স্ক ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই জুনিয়র কমিশন প্রাপ্ত সেনা অফিসারের জন্য দেশে বিরাট অভ্যর্থনার আয়োজন শুরু হয়ে গেছে।
এদিকে ভারতের BR TV ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বর্ণ পদক লাভের পরপরই এক ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বর্ণ বিজয়ী নীরজ চোপড়া অভিনন্দন জানিয়ে যে কথোপকথন করেছেন, তার ভিডিও ফুটেজ সম্প্রচার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নীরজ চোপড়াকে দেশের জন্য এই ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করায় ধন্যবাদ জানান।
পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছেন, টোকিওর বিশ্ব অলিম্পিকে ভারতের অবশেষে স্বর্ণ পদক লাভ। জ্যাভলিনে স্বর্ণপদক জিতে নতুন বর্শা-মঙ্গল মহাকাব্য রচনা নীরজ চোপড়ার।
পত্রিকাটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার (পিটিআই) উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,দুর্দান্ত দুই থ্রোয়ে সোনার খরা কাটিয়ে দিলেন নীরজ চোপড়া। অলিম্পিক্সের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের কোনও ইভেন্টে পদক জিতলেন। তা-ও একেবারে সোনা জিতে নিলেন তিনি।
শনিবার ফাইনালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ৮৭.৫৮ মিটার ছুড়ে পদক জিতলেন তিনি। এর আগে অ্যাথলেটিক্সে ভারত সোনা তো দূর, কোনও পদকই জেতেনি। সেই আক্ষেপ মিটিয়ে দিলেন নীরজ। শনিবারের আগে পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতার পর অলিম্পিক্সে মাত্র ৯টি সোনা জিতে ছিল ভারত। এর মধ্যে আটটি ছিল হকিতে। ব্যক্তিগত বিভাগে মাত্র একটি সোনা ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক্সে শুটিংয়ে জিতেছিলেন অভিনব বিন্দ্রা। নীরজ চোপড়া দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতলেন।
শনিবার জ্যাভলিনের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন নীরজ। প্রথম প্রচেষ্টায় ৮৭.০৩ মিটার ছুড়ে বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে যান। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় দূরত্ব আরও বাড়িয়ে নেন তিনি। এ বার ছোড়েন ৮৭.৫৮ মিটার। হাত থেকে জ্যাভলিন বেরনো মাত্রই পিছনের গ্যালারির দিকে তাকিয়ে দু’হাত তুলে উল্লাস করতে থাকেন নীরজ। সেখানে বসেছিলেন তাঁর কোচ উয়ে হন এবং ভারতীয় দলের আধিকারিকরা।
চিন্তা ছিল জার্মানির জোহানেস ভেটারকে নিয়ে। যোগ্যতা অর্জন পর্বেও ভেটার ভাল কিছু করতে পারেননি। তবে অনেকেই মনে করেছিলেন, ফাইনালে তিনি নিজের আসল রূপ দেখাবেন। তবে ফাইনালে প্রথম তিন প্রচেষ্টার পরেই তিনি ছিটকে যান। লড়াইটা মূলত ছিল চেক প্রজাতন্ত্রের দুই থ্রোয়ারের সঙ্গে নীরজের। কিন্তু দু’জনেই শেষ দুটি থ্রোয়ে ফাউল করে বসেন। ফলে নিজের ষষ্ঠ থ্রোয়ের আগেই সোনা জিতে যান নীরজ।
১৩৫ কোটি মানুষের দেশে প্রথম বার অ্যাথলেটিক্স থেকে পদক এল। প্রয়াত মিলখা সিংহ, পি টি ঊষা, অঞ্জু ববি জর্জ, বিকাশ গৌড়ার মতো ক্রীড়াবিদরা কাছে এসেও পদক জিততে পারেননি। সেই অভাব ঢেকে দিলেন নীরজ। তাঁকে এ বার জ্যাভলিনে পদক জেতার অন্যতম দাবিদার মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর থেকে অনেক এগিয়ে থাকা ক্রীড়াবিদদের টপকে যে তিনি সোনা জিতবেন, এটা তাঁর অন্ধভক্তও ভাবতে পারেননি। ভারত টোকিওর এই গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব অলিম্পিকে ১টি স্বর্ণ, ২টি রোপ্য ও ৪টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে ৪৭ তম স্থানে অবস্থান করছে।
14,733 total views, 1 views today