সুইস বিজ্ঞানীর আশঙ্কা সামনে আসছে করোনার “সুপার ভ্যারিয়েন্ট ” কোভিড-২২

সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী সাই রেড্ডি একটি নতুন করোনা রূপ বা ভ্যারিয়েন্টের ঈঙ্গিত দিয়েছেন,যা ডেল্টার চেয়েও অনেক বেশি বিপজ্জনক
কবির আহমেদ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সুইজারল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন সুইস ফেডারেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ইটিএইচ জুরিখের একজন গবেষক করোনাভাইরাসের একটি নতুন “সুপার ভেরিয়েন্ট” এর সম্ভাব্য উত্থানের বিষয়ে সতর্ক করেছেন যা বিদ্যমান স্ট্রেনগুলিকে একত্রিত করতে পারে।
সুইস পত্রিকা Sonntags Blick এর রোববারের বিশেষ প্রকাশনায় এক সাক্ষাৎকারে সুইস বিজ্ঞানী ও গবেষক সাই রেড্ডি বলেন, “এখন এটা খুবই সম্ভব যে,করোনার সকল ভ্যারিয়েন্টের সংমিশ্রণে গঠিত হতে যাচ্ছে করোনার নতুন “সুপার ভ্যারিয়েন্ট কোভিড-২২” অর্থাৎ চলমান সকল করোনার ভ্যারিয়েন্টের সংমিশ্রণে তৈরী হতে পারে এই “সুপার ভ্যারিয়েন্ট ” কোভিড-২২। এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবের পর আমাদের আর শুধুমাত্র এই প্রতিষেধক টিকার উপরেই নির্ভর করলে চলবে না।
তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, করোনার এই ধরনের একটি নতুন রূপ অবশ্যই সুইজারল্যান্ডে পৌঁছাবে।সুইস বিজ্ঞানী রেড্ডি বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের বাসেলের ফেডারেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ইটিএইচ জুরিখের বায়োসিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
৪০ বছর বয়স্ক এই সুইস বিজ্ঞানী পত্রিকাটিকে আরও বলেন,”এজন্যই আমাদের আগামী কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, যা ক্রমাগত নতুন রূপের সাথে মানিয়ে নেওয়া হবে।”
করোনার ঘন ঘন ভ্যারিয়েন্টের পরিবর্তনের দিকে ঈঙ্গিত দিয়ে বলেন,দক্ষিণ আফ্রিকার (বিটা) এবং ব্রাজিল (গামা) থেকে করোনাভাইরাস রূপের দিকে ইশারা করেছিলেন যা পরিবর্তিত হয়েছে, তাদের আংশিকভাবে অ্যান্টিবডিগুলি এড়ানোর অনুমতি দেয়। অন্যদিকে, ডেল্টা অনেক বেশি সংক্রামক, কিন্তু এখনও এই ধরনের মিউটেশন তৈরি করেনি।
রেড্ডি বলেন, “যদি বিটা বা গামা আরও সংক্রামক হয়ে ওঠে, অথবা যদি ডেল্টা মিউটেশন তৈরি করে, তাহলে আমরা মহামারীর একটি নতুন পর্বের কথা বলতে পারি।” এটি আগামী বছরে একটি নতুন বড় সমস্যা হয়ে আমাদের সামনে হাজির হবে। কোভিড-২২ এমনকি আমরা এখন যা অনুভব করছি তার চেয়েও খারাপ আকার ধারণ করতে পারে”।
সুইস পত্রিকাটি আরও জানিয়েছেন, জুনের শেষের থেকে সুইজারল্যান্ডে পুনরায় করোনার নতুন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে নির্ধারিত আইসিইউ ও হাসপাতালে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে সংক্রমণের তুলনায় মৃত্যুর হার কম। সুইজারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫০ শতাংশ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা নিয়েছেন।
সুইজারল্যান্ডের কোভিড -১৯ টাস্কফোর্সের নতুন প্রধান তানজা স্ট্যাডলার বলেন, বর্তমানে দেশে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি “খুব কঠিন” অবস্থায় আছে।তিনি দেশে করোনার সংক্রমণ বিস্তারের জন্য ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করেছেন। তিনি আরও জানান দেশের এই নতুন করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণ মূলত অত্যন্ত সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করেন নি তারাই মূলত সংক্রমিত হচ্ছেন। এই নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে ১০ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে অল্প বয়সের মানুষই বেশী।
রেড্ডি আশঙ্কা করে বলেন আসন্ন শরতে সুইজারল্যান্ডে করোনার নতুন সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন,”যদি টিকাদানের হার দ্রুত বৃদ্ধি না পায়, তবে শুধুমাত্র কঠোর বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থাগুলি সবচেয়ে খারাপ ঘটনাকে প্রতিরোধ করতে পারে।”তিনি উল্লেখ করেছেন যে সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ডেল্টা বৈকল্পিকের ভাইরাল লোড এত বেশি যে এটির সংকোচনহীন যে কোনও ব্যক্তি এটি “সুপার-স্প্রেডার” হয়ে উঠতে পারে।
রেড্ডি বলেন, “যেহেতু ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া যায় না, তাই তারা সম্ভাব্য সুপার স্প্রেডারের একটি বড় গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।” তিনি বলেন, “আমাদের একটি উচ্চ স্তরের অ্যান্টিবডি দিয়ে এটি মোকাবেলা করতে হবে এবং ভ্যাকসিনের তৃতীয় বুস্টার ডোজ ঠিক সেটাই করবে”।
অস্ট্রিয়া এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে বর্তমানে করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। যদিও এই সমস্ত দেশ সমূহে জনসংখ্যার একটি বড় অংশই করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নেয়ার সাথে সাথেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবের ফলে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ আবার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুইস বিজ্ঞানী ও গবেষক সাই রেড্ডি বলেন,বিজ্ঞান এবং রাজনীতির জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।”যদি এই ধরনের নতুন বৈকল্পিকতা দেখা দেয়, তাহলে আমাদের এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিনতে হবে এবং ভ্যাকসিন নির্মাতাদের দ্রুত ভ্যাকসিনটি খাপ খাইয়ে নিতে হবে।” যাই হোক না কেন, বিজ্ঞানী রেড্ডি ইউরোপিয়ানদের জন্য আগামী ছয় মাস খুব কঠিন মাস বলে মনে করেন। তার অনুমান অনুযায়ী, আসন্ন শরৎ ও শীতকাল হবে গত বছরের মতোই। যদি সংক্রমণের বিস্তার দ্রুত রোধ করা না যায় তাহলে আগামী ২০২২ এর শুরুতেই সৃষ্টি হতে পারে সেই “সুপার ভ্যারিয়েন্ট, কোভিড-২২”।
14,635 total views, 1 views today