অস্ট্রিয়া হাঙ্গেরির সীমান্ত দিয়ে গত দুই সপ্তাহে ১২০০ শত অবৈধ অভিবাসীর বুর্গেনল্যান্ডে প্রবেশ

অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে গ্রিসের টহল পুলিশ দেশটির তুরস্ক সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে একটি ডিজিটাল ডিভাইস স্থাপন করেছে
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা Kronen Zeitung জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তী বুর্গেনল্যান্ডের রাজ্যের ব্যবস্থাপক রোল্যান্ড ফার্স্ট (SPÖ) বলেছেন গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১২০০ শত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এই রাজ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। তিনি অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামারের (ÖVP) তীব্র সমালোচানা করে অবৈধ অভিবাসীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় তার পদত্যাগ দাবী করেছেন।
তিনি জানান,আমরা বছরের শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে অবৈধ অভিবাসীদের জোয়ার সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন এবং নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব বাদ দেওয়ার ফলেই এই বিশাল অবৈধ অনুপ্রবেশকারী আমাদের দেশে অনায়াসেই ডুকে পড়ছে।
বুর্গেনল্যান্ড রাজ্যের সীমান্তবর্তী Jennersdorf জেলার Neuhaus am Klausenbach শহরের মেয়র Reinhard Jud-Mund (SPÖ) বলেন,তার শহরের একটি পরিত্যক্ত থানা ভবন অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আশ্রয়স্থল প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা করছেন তিনি। ভবনটি পুরানো থানা, যা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খালি রয়েছে। তিনি আরও জানান,রাজ্য পুলিশ সদর দফতর তাকে সম্প্রতি জানিয়েছেন যে,এটিকে একটি শরণার্থী শিবির বা জরুরি আশ্রয়স্থল হিসাবে পুনরায় প্রস্তুত করতে।
বুর্গেনল্যান্ড রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছেন অস্ট্রিয়ার প্রধান বিরোধীদল SPÖ কিন্ত সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামারের (ÖVP) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের। রাজ্যের ব্যবস্থাপক রোল্যান্ড ফার্স্ট (SPÖ) আরও জানিয়েছেন বর্তমানে আমাদের এই রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসন। তিনি বলেন রাজ্যের গভর্নর হ্যান্স পিটার ডোসকোজিল (SPÖ) আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই বিষয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিষয়টি জাতীয় সংবাদ মাধ্যমকে আনুষ্ঠানিক অবহিত করবেন এবং এই বিষয়ে তার রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা এবং করণীয় পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারেন বলে জানা গেছে।
এদিকে জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে (DW) জানিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রিসের টহল পুলিশ দেশটির তুরস্ক সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে একটি ডিজিটাল ডিভাইস স্থাপন করেছে। গাড়ির উপরে বসানো এই যস্ত্রটি ‘শব্দ কামান’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ এর মাধ্যমে জেট ইঞ্জিনের মতো উচ্চ শব্দে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় সীমান্তরক্ষীরা।

মহামারির সময়ে এমন যন্ত্র স্থাপন করেছে কর্তৃপক্ষ। তুরস্ক সীমান্তের দুইশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাহারা দেয়া যন্ত্রটি অভিবাসীদের অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশ ঠেকাতে সতর্কতার কাজে ব্যবহারের জন্য বানানো হয়েছে। তাছাড়া, দুদেশের এভরোস নদী সংলগ্ন সীমান্তে একটি ইস্পাতের দেয়ালও স্থাপন করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষণ টাওয়ারগুলোতে শক্তিশালী ক্যামেরাসহ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন যন্ত্র বসানো হয়েছে। যন্ত্রগুলোর থেকে প্রাপ্ত তথ্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিশ্লেষণ করে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করছে এমন অভিবাসীদের অবস্থান সর্ম্পকে জানান দেবে। এই অঞ্চলের সীমান্ত রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশবাহিনীর প্রধান দিমোনসথেনিস কামারগিউস বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেন, “এর মাধ্যমে আমরা সীমান্তে কি হচ্ছে তার একটি পরিষ্কার চিত্র পাব।”
সীমান্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারির কাজ করার বিষয়ে র্দীঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে ইইউ কর্তৃপক্ষ। ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সঙ্কটের পর নিরাপত্তা বিষয়ে প্রযুক্তিখাতে গবেষণার জন্য তিন বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে তারা। বলা হচ্ছে, তুরস্ক-গ্রীস সীমান্তে পাহারা দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত এ প্রযুক্তি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগে থেকে চিহ্নিত করতে পারবে এবং তাদেরকে প্রবেশে বাধা দেবে। সেই সাথে আছে জল ও স্থলপথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে সার্চলাইট ও শব্দ কামানের ব্যবহার।
কামারগিউস জানান, এ প্রযুক্তির মূল অংশগুলো চলতি বছরের শেষে দিকে চালু করা হবে। “আমাদের কাজ হলো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অবৈধভাবে প্রবেশে বাধা দেওয়া। আর এর জন্য আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।”
ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে নজরদারির এমন আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে এবং গ্রিস সীমান্তে অন্তত এক ডজন প্রজেক্টে পরীক্ষামূলকভাবে তা যাচাই করেছে।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে চিহ্নিতকরণ যন্ত্র এবং ভার্চুয়াল বর্ডার গার্ড প্রযুক্তি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। সেই সাথে রয়েছে ড্রোন থেকে প্রাপ্ত তথ্য যার মাধ্যমে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের বিষয়ে আগে থেকেই ত্যথ পাওয়া যাবে। হাঙ্গেরি, লাটভিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের সীমান্তেও এমন ডিজিটাল নজরদারির যন্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে যাচাই করা হয়েছে।
গত পাঁচ বছর ধরে ইউরোপের নীতি-নির্ধারকরা অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর এমন আগ্রাসী কৌশল নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর সাথে বিভিন্ন অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর এবং ইইউ সীমান্তে নিয়োজিত সুরক্ষা এজেন্সি ফ্রোনটেক্সকে পুনর্গঠন সহ নানা কাজ করছে।
14,615 total views, 1 views today