ভারতের সভাপতিত্বে ব্রিকস সম্মেলনে আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা

 কবির আহমেদ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ BRICS (ব্রিক্‌স) হলো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের যথাক্রমে রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা আদ্যক্ষরের সমন্বয়ে নামকরণকৃত উদীয়মান জাতীয় অর্থনীতির একটি সংগঠন।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের সভাপতিত্বে ব্রিকসের ১৩ তম শীর্ষ সম্মেলনটি অনলাইন ভার্চুয়ালে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই শীর্ষ সম্মেলনে আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এই আলোচনায় তালেবান সম্পর্কে কোন আলোচনা হয় নি বলে জানিয়েছেন ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই। তবে এই ভার্চুয়াল আলোচনায় আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি, মানবাধিকার, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করেছে ব্রিকস।

ভারতের জাতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে এই ভার্চুয়াল কনফারেন্সে সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে গৃহীত নতুন দিল্লি ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের অধিকার বজায় রাখতে হবে। মানবিক সংকটের মোকাবিলা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে।

ব্রিকস সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের জমিন থেকে যেন আর কোনো সন্ত্রাসবাদী সৃষ্টি না হয় এবং আফগানিস্তান যেন সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্য না হয়ে ওঠে।

ব্রিকস সম্মেলনে আফগানিস্তান আফগানিস্তান নিয়ে সব চেয়ে কড়া মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানে অস্থিরতা থাকলে প্রতিবেশী দেশগুলিতে তার প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, আফগানিস্তান যেন মাদক পাচার ও সন্ত্রাসের কেন্দ্র না হয়। সে দেশের মানুষকে অধিকার দিতে হবে, তারাই ঠিক করবেন তাদের দেশ কি রকম হবে।

এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের অভিযোগ করে বলেন,অ্যামেরিকা ও তার বন্ধু দেশগুলি আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে সমগ্র বিশ্বের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক কৌশলগত স্থিরতা নষ্ট হয়েছে। আঞ্চলিক বিরোধও মেটেনি। একটা গোলমেলে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

১৩ তম ব্রিক্‌সের ভার্চুয়াল এই শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে হবে। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। নিজেদের অগ্রাধিকার ঠিক করে নিতে হবে। সহযোগিতার ভিত্তিতে চলতে হবে। সেই সহযোগিতা যেন ফলপ্রসূ হয়। বাস্তব চাহিদার কথা মাথায় রেখে দরকার হলে সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে।

ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ব্রিকসের সভাপতিত্ব করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। করোনা সংকটের সময় ব্রিকস দেশগুলি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করেছে। ভারত চায়, আগামী ১৫ বছরে ব্রিকস দেশগুলি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা যেন অনেকটাই বাড়াতে পারে।

এদিকে, এই ভার্চুয়াল কনফারেন্সে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসনারো করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে ব্রাজিল সরকার, ভারত এবং চীনের মধ্যে অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেছেন। ব্রাজিল এবং ভারতের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব একটি চমৎকার মুহূর্ত হচ্ছে। আমাদের সহযোগিতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শক্তি, এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এবং সর্বোপরি কোভিড -১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রসর হয়েছে,” বলসানারো বলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা তার বক্তব্যে বলেন, যে কোভিড -১৯ এর প্রতি ব্রিকস দেশগুলির সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করেছে যে অংশীদার দেশগুলি একসাথে কাজ করলে কি অর্জন করা যায়। তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন, ডায়াগনস্টিকস এবং থেরাপিউটিক্সের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বব্যাপী এই মহামারীর প্রতি সাড়া দিতে পারি।”

শীর্ষ সম্মেলন শেষে জারি করা এক ঘোষণায় ব্রিকস সহিংসতা থেকে বিরত থাকার এবং আফগানিস্তানের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তির আহবান জানানো হয়েছে। ব্রিকসের দিল্লি ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে,“আমরা সহিংসতা থেকে বিরত থাকার এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিস্থিতি নিষ্পত্তির আহ্বান জানাই। আমরা আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীলতা, নাগরিক শান্তি, আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্ত আফগান সংলাপের জন্য অবদান রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছি।”

ব্রিকস সম্প্রতি কাবুল বিমানবন্দরের কাছে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, যার ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা গেছে এবং আহত হয়েছে।সন্ত্রাসবাদের হুমকির বিষয়ে, ব্রিকস বলেছে যে, এটি সন্ত্রাসীদের সীমান্তে চলাচল সহ সকল প্রকার এবং প্রকাশে এই বিপদ মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সম্মেলনে গ্রুপের সদস্য দেশগুলোর এনএসএ কর্তৃক গৃহীত গ্রুপিং-এর সন্ত্রাস-বিরোধী কৌশল বাস্তবায়নের জন্য ব্রিকস-সন্ত্রাস-বিরোধী কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে।

সর্বশেষ কিন্তু কমপক্ষে নয়, ব্রিক্সের ঘোষণাপত্রটি মূলত উল্লেখ করে যে, আফগানিস্তানের ভূখণ্ড অবশ্যই অন্য দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য ব্যবহার করা উচিত নয় এবং সন্ত্রাসবাদীদের সীমান্তে চলাচলসহ সকল প্রকার ও প্রকাশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।

 14,636 total views,  1 views today