আজ থেকে অস্ট্রিয়ায় করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাবের নতুন বিধিনিষেধ শুরু

কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ পুলিশ প্রশাসন ও সুপারমার্কেট কর্তৃপক্ষ FFP2 মাস্ক পড়া নিয়ন্ত্রণ করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী মার্গারেট শ্রামবক।
সকলের জন্য গণপরিবহন,কেনা-কাটায় ও অফিস- আদালতে FFP2 পড়া বাধ্যতামূলক। অস্ট্রিয়ার অধিকাংশ সুপারমার্কেট তাদের গ্রাহকদের ফ্রি FFP2 মাস্ক সরবরাহ করছে।
আজ বুধবার ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রিয়ায় করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর শুরু হয়েছে। যারা করোনার এই বিধিনিষেধ অমান্য করবে তাদের জন্য জরিমানা কমপক্ষে €৯০ ইউরো থেকে শুরু হবে বলে অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন, আজ রাজধানী ভিয়েনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী মার্গারেট শ্রামবক (ÖVP) জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসন দেশের বিভিন্ন সুপারমার্কেট ও অন্যান্য দোকানপাটে FFP2 মাস্ক পড়া নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি আরও জানান অস্ট্রিয়ার সকল সুপারমার্কেট কর্তৃপক্ষকে তাদের দোকানপাটে নিজেরাও FFP2 মাস্ক নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অস্ট্রিয়ার রাস্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন ORF এর সংবাদ বিষয়ক অনুষ্ঠান ZIB জানিয়েছেন সমগ্র অস্ট্রিয়ায় আজ থেকে করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে সরকার ঘোষিত নতুন বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে।
গত সপ্তাহে সরকার ঘোষিত নতুন বিধিনিষেধ নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল:
১. করোনার এন্টিজেন বা দ্রুত টেস্ট আজ থেকে ৪৮ ঘন্টার পরিবর্তে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে। অবশ্য এই আইন স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হবে না।শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কুলে সপ্তাহে তিনবার করোনার পরীক্ষার (“নিনজা পাস”) ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২. এতদিন যেখানে নাক ও মুখের সুরক্ষার জন্য সাধারণ মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক ছিল যেমন দোকানপাট, বাজার,গণপরিবহন ও নিত্য প্রয়োজনীয় সেবা ইত্যাদিতে আজ থেকে সে সমস্ত জায়গায় FFP2 মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক।
৩. যারা এখনও করোনার প্রতিষেধক টিকা নেয়নি তারা এই সমস্ত স্থান ব্যতীত অন্যান্য স্থান যেমন লাইব্রেরী, যাদুঘর,চিড়িয়াখানা সহ অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে FFP2 মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক।অবশ্য যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা নিয়েছেন বা সম্প্রতি করোনার থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন তাদের উপরোক্ত স্থানে সাধারণ মাস্ক পড়লেও চলবে।
৪. ” ৩-জি” নিয়ম(প্রবেশাধিকার শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা নিয়েছে,করোনার থেকে সুস্থতা লাভ করেছে এবং করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে) যেখানে ২৫ জন থেকে সর্বোচ্চ ১০০ জন লোক একসাথে কোন অনুষ্ঠানে মিলিত হবে।
৫. পূর্বে যেখানে বাধ্যতামূলক ৩-জি (3-G) সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক ছিল যেমন রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং অবসর সুবিধাগুলিতে তা অব্যাহত বহাল থাকবে।
৬. অস্ট্রিয়ার যে কোন রাজ্য করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরও কঠোর বিধিনিষেধ বা শিথিলতা আরোপ করতে পারবে।যেমন রাজধানী ভিয়েনায় করোনার সংক্রমণ অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিয়েনা রাজ্য প্রশাসন আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে বলে এক ঈঙ্গিতে জানানো হয়েছে।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ২,৬২৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ জন।রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮৮৮ জন। যা গত ৬ মাস পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আজ রাজধানী ভিয়েনার স্বাস্থ্য প্রশাসন জানিয়েছেন রাজধানীতে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১,৬০,২৭১ জন এবং এই পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২,৩৮২ জন।ভিয়েনায় এই পর্যন্ত করোনার থেকে সুস্থতা লাভ করেছেন মোট ১,৪৯,৯৩৭ জন। রাজধানী ভিয়েনায় বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮,০০০ হাজার।
অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৫১৯ জন,NÖ রাজ্যে ৪৭০ জন,Steiermark রাজ্যে ২৪৭ জন,Salzburg রাজ্যে ১৭৪ জন,Tirol রাজ্যে ১১০ জন,Kärnten রাজ্যে ৯০ জন,Vorarlberg রাজ্যে ৭৭ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৪৯ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ১৯,১৫৭ ডোজ এবং এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকাদানের পরিমাণ ১,০৬,৫৩,৭২৩ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৭৫ ডোজ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৯,৫ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭,১৫,৮৯৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০,৮৫৬ জন।করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছে মোট ৬,৮২,৯৭১ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২২,০৬৬ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ১৯৮ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৮২৫ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন
14,634 total views, 1 views today