ব্রেক্সিট পরবর্তী ভয়াবহ শ্রমিক সংকটের মুখোমুখি বৃটেন

ট্রাক ও লরি চালকসহ অর্থনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে বড় ধরণের শ্রমিক সংকটের মুখোমুখি বৃটেন
ইউরোপ ডেস্ক থেকে, কবির আহমেদঃ ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন বর্তমান সংকট ঠেকাতে তিন মাস মেয়াদের ১০,৫০০টি অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৃটিশ সরকার।ব্রেক্সিটের পর অভিবাসনে অপ্রত্যাশিত মোড় নিয়েছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থা। শনিবার বৃটিশ সরকার জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান শ্রমিক অভাবের প্রতিক্রিয়ায় আপাতত ১০,৫০০ টি অস্থায়ী কাজের ভিসা প্রদান করা হবে।
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ থাকা এই তিন মাসের অস্থায়ী ওইয়ার্ক পারমিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে ট্রাক চালক পেতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা দূর করা। এছাড়া ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর যেমন পোল্ট্রি ফার্ম খাতে কর্মী সংকট দূর করা।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ব্রিটিশ সরকার সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও, মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে গ্যাস স্টেশনগুলিতে রীতিমত সংকট সৃষ্টি হয়েছে যা কৃষি ও খাদ্য খাতকেও প্রভাবিত করেছে। এখন পর্যন্ত, সরকার জ্বালানি তেল বিতরণে সহায়তা করার জন্য সেনা মোতায়েনের আহ্বানে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
পুনরায় পেশাদার অভিবাসনের দরজা খোলার এই সিদ্ধান্তটি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কট্টর অভিবাসন বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে। কারণ বরিস জনসন শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলেছিলেন, “যুক্তরাজ্য আর বিদেশী কর্মীদের উপর নির্ভর করবে না।”কয়েক মাস ধরে অনেক অর্থনৈতিক খাতের সতর্কতা এবং ১ লাখ ট্রাক ও ভারী যানবাহন চালকের ঘাটতি সত্ত্বেও সরকার তা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে।
যুক্তরাজ্যের পরিবহন সচিব গ্রান্ট শ্যাপস নিশ্চিত করেছেন, শ্রমিক ঘাটতি মেটাতে নতুন এই কাজের ভিসার পদক্ষেপ ছাড়াও বড়দিনের ছুটির আগে অন্যান্য আরও ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা নেয়া হবে । আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষকরা হাজার হাজার ভারী যানবাহনের লাইসেন্স দিতে একত্রে কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে।

ট্রাক চালকদের প্রশিক্ষণ, বৃটেনের শিক্ষা বিভাগ এবং তার সহযোগী সংস্থাগুলিতে গতি বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করে ৪,০০০ ট্রাক চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। পরিবহন সচিব মি. শ্যাপস নতুন চালকদের কাজে ধরে রাখতে কাজের পরিবেশ ও বেতন বাড়াতে নিয়োগকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
চাপের মধ্যে সরকার ভারী যানবাহনের লাইসেন্স থেকেও কাজ করছে না এমন প্রায় এক মিলিয়ন ব্যক্তিকে কাজে ফিরতে একযোগে চিঠি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউকে চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট রুবি ম্যাকগ্রেগর-স্মিথ বলেন, “নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসার সংখ্যা “অপর্যাপ্ত” এবং এই মাত্রার সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। এই ঘোষণাটি মূলত এক গ্লাস পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করার মতো।”
ইতিমধ্যে নানান ইস্যুতে বরিস জনসন ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি ছিলেন। কোভিড -১৯ এবং ব্রেক্সিটের পরিণতি এই সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যার সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে জালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন কারখানা, রেস্তোরাঁ এমনকি সুপার মার্কেটগুলো পর্যন্ত ট্রাক চালকের অভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
আইসল্যান্ডের হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি এবং খুচরা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান টেসকো বড় দিনের সময় সংকট তৈরী হতের পারে বলে সতর্ক করেছে। এদিকে ফাস্ট ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডস জানিয়েছে, গত মাস থেকে মিল্কশেক এবং কোমল পানীয় মজুদ শেষ হয়ে গেছে। তাদের অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী আরেক ফাস্টফুড চেইন কেএফসি তাদের খাবার মেনু থেকে বেশ কয়েকটি খাবার অস্থায়ীভাবে অপসারণ করতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে আরেক ফাস্ট ফুড চেইন নান্দো পর্যাপ্ত মুরগি সরবরাহের অভাবে তাদের কয়েক ডজন শাখা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে।

গতকাল অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,৩১২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩৮৩ জন।
অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ২৯৩ জন, NÖ রাজ্যে ২০২ জন, Steiermark রাজ্যে ১৩৭ জন, Tirol রাজ্যে ৯২ জন, Kärnten রাজ্যে ৮৮ জন, Salzburg রাজ্যে ৬৩ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৪০ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১৪ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে আজ দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে মাত্র ২,১৯৩ ডোজ এবং মোট টিকা দেয়া হয়েছে ১,০৭,৯২,৯৪৪ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৪৪ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬০,৩ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৩৭,২০২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০,৯৭৬ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৭,০৫,১০২ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২১,১২৪ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২৩৪ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৮৮৪ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,639 total views, 1 views today