ইংল্যান্ডে দুইটি নতুন প্রজাতির ডাইনোসরের কঙ্কাল আবিষ্কৃত

 ইউরোপ ডেস্ক থেকে কবির আহমেদঃ বৃটিশ বিজ্ঞানীরা ইংল্যান্ডের বাইরে আইল অফ উইটে একটি চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানায়,বেশ কয়েক বছর ধরে বৃটিশ বিজ্ঞানীরা ইংল্যান্ডের ব্রাইস্টোনের কাছে একটি সমুদ্র সৈকতে বড় মাংসাশী ডাইনোসরের দুইটি পূর্বে অজানা স্পিনোসরিড (“কাঁটাওয়ালা টিকটিকি”) প্রজাতির ৫০ টিরও বেশি জীবাশ্মযুক্ত হাড় আবিষ্কার করেছে।আবিষ্কৃত কঙ্কালের মধ্যে উভয় প্রাণী দুইটির একটি কুমিরের মতো খুলি ছিল এবং তারা নয় মিটার পর্যন্ত লম্বা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃটিশ দৈনিক পত্রিকা “মিরর” জানিয়েছে এই দুইটি নতুন ডাইনোসরের প্রজাতির আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের জন্য একটি “বিস্ময়” ছিল। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা রিপোর্ট করেছেন যে সেরাতোসোচপস ইনফেরোডিওস এবং রিপারোভেনেটর মিলনারি নামে ডাইনোসরগুলি ভয়ঙ্কর শিকারী ছিল।

বৈজ্ঞানিক নাম Ceratosuchops inferodios, যা অনুবাদ করে “Hell’s heron with a horned কুমিরের মুখ”, ডাইনোসরের কপাল অঞ্চলে এবং তার আশেপাশে ছোট ছোট শিং এবং বাধাগুলি বোঝায় এবং সেই সাথে তার হেরনের মত শিকারের ধরনকে বোঝায়।

তিন মিটারেরও বেশি উঁচু এবং পাঁচ টনের ওজনের দ্বিতীয় প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছিল রিপারোভেনেটর মিলেনেরা, যা অনুবাদ করে “মিলনার রিভারসাইড হান্টার”। এই নামটি সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারী ব্রিটিশ জীবাশ্মবিদ অ্যাঞ্জেলা মিলনারের সম্মানে দেয়া হয়েছে। উভয় প্রাণী তিন মিটারেরও বেশি লম্বা এবং প্রায় পাঁচ টন ওজনের ছিল, সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের ওয়েবসাইটে এই সম্পর্কে রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন।

ব্রিটিশ ডাইনোসরস বিশেষজ্ঞ ড্যারেন নায়েশ বলেন, “আমরা কয়েক দশক ধরে জানি যে ব্যারিওনিক্সের মত ডাইনোসরগুলি আইল অব উইটে আবিষ্কার হওয়ার অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু কাছাকাছি পরবর্তীতে এরকম দুইটি প্রাণীর দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া খুবই বিস্ময়কর ছিল।”

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে ডাইনোসর হল অধুনা অবলুপ্ত বৃহদাকার মেরুদণ্ডী প্রাণী ও পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক যুগের অধিবাসী।ডাইনোসর বলতে জনপ্রিয় ধারণায় একটি অধুনা অবলুপ্ত, সাধারণত বৃহদাকার মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠীকে বোঝায়। এরা পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান এই প্রভাবশালী প্রাণীরা প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে।

প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে একটি বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডাইনোসরদের প্রভাবকে পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেয়। তাদের একটি শ্রেণীই কেবল বর্তমান যুগ পর্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছে বলে ধারণা করা হয়: শ্রেণীবিন্যাসবিদরা ধারণা করেন আধুনিক পাখিরা থেরোপড ডাইনোসরদের সরাসরি বংশধর।জীবাশ্ম দ্বারা প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে জুরাসিক যুগে সংঘটিত এই বিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

শ্রেণীবিন্যাসগত, অঙ্গসংস্থানগত ও পরিবেশগত দিক থেকে ডাইনোসর কথাটিকে বিভিন্ন প্রকারের কতকগুলি প্রাণীর একটি সাধারণ নাম হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। জীবাশ্ম প্রমাণ থেকে পুরাজীববিদরা উড়তে অক্ষম ডাইনোসরদের ৫০০ এরও বেশি গণ ও ১০০০ এরও বেশি প্রজাতিকে শনাক্ত করেছেন। সব কয়টি মহাদেশেই ডাইনোসরদের জীবন্ত ও প্রস্তরীভূত নানা প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়,যাদের মধ্যে শাকাহারী ও মাংসাশী- উভয় প্রকার উদাহরণই রয়েছে। যদিও উৎপত্তিগতভাবে ডাইনোসরেরা দ্বিপদ, কিন্তু অবলুপ্ত অনেক চতুষ্পদ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে, এবং কোনো কোনো প্রজাতি গমনের সময় প্রয়োজনমত দুই পা অথবা চার পা ব্যবহার করতে পারত। সমস্ত বিভাগের ডাইনোসরদের মধ্যেই শিং, হাড় ও চামড়ার পাত প্রভৃতি প্রদর্শনমূলক অঙ্গসংস্থানের নিদর্শন রয়েছে এবং কোনো কোনো অবলুপ্ত প্রজাতির কঙ্কালে হাড়ের বর্ম ও কাঁটার মত গঠন লক্ষ্য করা যায়। বিভাগ নির্বিশেষে ডাইনোসরদের অন্যতম সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল ডিম পাড়া ও বাসা বানানোর অভ্যাস।

উড়ার খাতিরে কিছু শারীরবৃত্তীয় বাধ্যবাধকতার জন্য আধুনিক পাখিরা আকারে ছোট হলেও প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরদের অনেকেই ছিল বিশালদেহী। বৃহত্তম সরোপড ডাইনোসরেরা ৫৮ মিটার (১৯০ ফুট) পর্যন্ত দীর্ঘ এবং ৯.২৫ মিটার (৩০ ফুট ৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত উঁচু হত। তবুও উড়তে অক্ষম ডাইনোসর মাত্রই বিশালাকার হবে- এই ধারণাটা ভুল। আবিষ্কৃত জীবাশ্মের বেশির ভাগই বড় মাপের ডাইনোসর- এ’কথা ঠিক। কিন্তু এর কারণ হল জীবাশ্মের আকার বড় হলে তা প্রকৃতির প্রতিকূলতা সহ্য করে প্রস্তরীভবন পর্যন্ত সহজে টিকে থাকতে পারে। আসলে অনেক ডাইনোসরই ছিল খুদে; যেমন, জিজিয়ানিকাস (Xixianykus) নামক ডাইনোসরটির দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার (প্রায় ২০ ইঞ্চি)।

যদিও ‘ডাইনোসর’ কথাটার আক্ষরিক অর্থ ভয়াবহ গিরগিটি, কিন্তু ডাইনোসরেরা প্রকৃতপক্ষে গিরগিটি নয়। বরং তারা সরীসৃপ শ্রেণীর অন্তর্গত একটা আলাদা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, যাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ অনেকাংশে বর্তমান সরীসৃপদের থেকে পৃথক; যেমন, তারা ছিল উষ্ণশোণিত এবং দ্বিপদ গমনে সক্ষম। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অর্থাৎ পাখিদের ডাইনোসর বলে চিহ্নিত করার আগে পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা ডাইনোসরদের অলস এবং অনুষ্ণশোণিত বলে মনে করতেন।

১৯৭০ এর দশক এবং তৎপরবর্তী অধিকাংশ গবেষণা থেকে অবশ্য জানা গেছে যে সমস্ত ডাইনোসর ছিল উচ্চ বিপাক হার যুক্ত, অতিমাত্রায় সক্রিয় প্রাণী এবং তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য বিভিন্নভাবে অভিযোজিত হয়েছিল। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ডাইনোসরের প্রথম জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এরপর থেকে পর্বতগাত্র বা শিলায় আটকা পড়ে থাকা ডাইনোসরের কঙ্কাল পৃথিবীর বিভিন্ন জাদুঘরে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ডাইনোসরেরা বর্তমান বিশ্ব সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। প্রধানত কোনো কোনো অবলুপ্ত ডাইনোসর প্রজাতির বিশাল আয়তন এবং তাদের সম্ভাব্য হিংস্র স্বভাবের দরুন তারা শিশু ও বয়স্ক সবার কাছেই বিশেষ আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

সর্বাধিক বিক্রিত বই এবং জুরাসিক পার্ক ইত্যাদি প্রচুর কাটতি পাওয়া চলচ্চিত্রে ডাইনোসর প্রসঙ্গ এসেছে এবং এ সংক্রান্ত নতুন যে কোনো আবিষ্কার গণমাধ্যমে বিশেষভাবে সম্প্রচার করা হচ্ছে।

 14,634 total views,  1 views today