বৃহস্পতি গ্রহের নিকটতম ট্রোজান গ্রহাণু পর্যবেক্ষণের জন্য নাসার অনুসন্ধানী রকেট উৎক্ষেপণ

নাসার উৎক্ষেপিত রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত রোবট মহাকাশযান লুসি আটটি দূরবর্তী গ্রহাণুর উপরে পর্যবেক্ষণ করবে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক থেকে কবির আহমেদঃ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস নিউজ জানিয়েছেন, আজ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সৌরজগতের সংরক্ষিত বিল্ডিং ব্লকের প্রতিনিধিত্বকারী আটটি অস্বাভাবিক গ্রহাণুর কাছাকাছি ফ্লাইবাই তৈরির জন্য আজ তারা বিলিয়ন ডলারের রোবট মহাকাশযান লুসিকে মহাকাশে পাঠিয়েছে। শনিবার স্থানীয় সময় ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে এটিকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। রোবট মহাকাশযান লুসি তার নির্দিষ্ট গন্তব্য ৬ বিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় নিবে ১২ বছর।
গ্রহাণু বেষ্টনী হল সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, মঙ্গল ও বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।এটি বেষ্টনী আকৃতি বিশিষ্ট সৌরজগতের অংশবিশেষ। অনিয়মিত আকার-আকৃতি বিশিষ্ট অসংখ্য গ্রহাণু ও গৌণ গ্রহ নামক সৌরজাগতিক বস্তু এ স্থান জুড়ে রয়েছে। পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহাণু ও ট্রোজান গ্রহাণু থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য গ্রহাণু বেষ্টনী কে প্রধান গ্রহাণু বেষ্টনী বা প্রধান বেষ্টনী ও বলা হয়ে থাকে। বেষ্টনীর প্রায় অর্ধেক ভর এর সর্ববৃহৎ চারটি গ্রহাণু, যথা: সেরেস, ভেস্তা, প্যাল্যাস, ও হাইজিয়া – এর মাঝে নিহিত। গ্রহাণু বেষ্টনীর মোট ভর চাঁদের ভরের প্রায় ৪%, যা প্লুটোর চেয়ে যথেষ্টই কম, এবং প্লুটোর উপগ্রহ শ্যারনের (যার ব্যাস প্রায় ১২০০ কিমি) প্রায় দ্বিগুণ। অন্তঃস্থিত সৌরজগৎ ও বৃহস্পতির গ্রহাণুসমূহ ট্রোজান জ্ঞাত গ্রহাণুগুলোর মাঝে সর্বোচ্চ ভরবিশিষ্ট বারোটির সাথে বেষ্টনীর বাকি সকল গ্রহাণুর ভরের তুলনা।
এ পর্যন্ত জানা মতে বেষ্টনীর বৃহত্তম বস্তু হল সেরেস। গ্রহাণু বেষ্টনীর মোট ভর প্লুটোর চেয়ে যথেষ্টই কম এবং প্লুটোর উপগ্রহ শ্যারন এর প্রায় দ্বিগুণ। গ্রহাণু বেষ্টনীর একমাত্র বামন গ্রহ, সেরেসের ব্যাস প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার (৫৯০ মা), অপরপক্ষে ভেস্তা, প্যাল্যাস ও হাইজিয়ার গড় ব্যাস ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মা) এর কম। গ্রহাণু বেষ্টনীর বাকি সদস্যগুলো ক্রমশ আরও ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর, ধূলিকাসদৃশ আকার-আকৃতি পর্যন্ত বিস্তৃত। বেষ্টনীর বস্তুগুলো এতটা হালকাভাবে বিস্তৃত যে অসংখ্য মানবশূণ্য নভোযান কোন প্রকার দুর্ঘটনা ছাড়াই একে অতিক্রম করেছে।
তবুও, বড় গ্রহাণুর মাঝে সংঘর্ষ মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে, যার ফলে গ্রহাণু পরিবারের সৃষ্টি হয়, যাদের কক্ষীয় বৈশিষ্ট্য ও গঠন উপাদান একই রকম। বেষ্টনীর একেকটি স্বতন্ত্র গ্রহাণুকে তাদের বর্ণালি অনুসারে শ্রেণিবিন্যস্ত করা হয় এবং অধিকাংশকেই: অঙ্গারময় (সি-শ্রেণী), সিলিকেট (এস-শ্রেণী) ও ধাতু সমৃদ্ধ (এম-শ্রেণী) – এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।
সিবিএস নিউজ জানিয়েছে লুসির অনুসন্ধানের গ্রহাণুগুলি ট্রোজান নামে পরিচিত। এগুলি দুইটি গ্রুপে মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মধ্যে পাথুরে ধ্বংসাবশেষের প্রধান বেল্টের বাইরে সূর্যকে চক্রাকারে প্রদক্ষিণ করছে। একটি ট্রোজানে রয়েছে ২ টি গ্রহাণু এবং অন্যটিতে ৫ টি গ্রহাণু।এই ট্রোজান দুটি মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ “ঝাঁকে” বিশাল গ্রহের মতো একই কক্ষপথে ঘুরছে, একটি গ্রুপ ৬০ ডিগ্রি এগিয়ে এবং অন্যটি ৬০ ডিগ্রী পিছনে।
সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান তদন্তকারী হ্যাল লেভিসন বলেন, “ট্রোজান গ্রহাণু বৃহস্পতিকে তার কক্ষপথে প্রায় ৬০ ডিগ্রি এগিয়ে নিয়ে যায় বা অনুসরণ করে।” “তারা সেখানে বৃহস্পতি এবং সূর্যের মহাকর্ষীয় প্রভাব দ্বারা আটকে আছে। সুতরাং আপনি যদি সৌরজগতের ইতিহাসের শুরুতে কোনও বস্তু সেখানে রাখেন, তবে এটি চিরতরে স্থিতিশীল ছিল।”
“তাহলে এই জিনিসগুলো আসলেই কোন গ্রহ থেকে গঠিত তার জীবাশ্ম পরীক্ষা করলে বুঝা যাবে। আমরা বুঝি গ্রহগুলি গঠিত হয়েছে যখন এই জিনিসগুলি একে অপরকে আঘাত করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এগুলিই এর অবশিষ্টাংশ। তাই যদি আপনি বুঝতে চান যে সৌরজগৎ কোথা থেকে এসেছে,তাহলে আপনার এই ছোট গ্রহাণুর কাছে যেতে হবে।
14,625 total views, 1 views today