অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তে দুই অভিবাসন শরণার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার

অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের বুর্গেনল্যান্ড-হাঙ্গেরিয়ান সীমান্তে একটি মিনিবাসে দুইজন শরণার্থীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বুর্গেনল্যান্ড রাজ্য পুলিশ প্রশাসন
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ সংবাদ সংস্থা এপিএ জানায় আজ মঙ্গলবার ১৯ অক্টোবর অস্ট্রিয়ার পূর্বে বুর্গেনল্যান্ড-হাঙ্গেরি সীমান্তে একটি মিনিবাসে দুইজন শরণার্থীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। বুর্গেনল্যান্ড রাজ্য পুলিশ বিভাগের একজন মুখপাত্র অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় দৈনিক Kronen Zeitung -এর সাথে এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার নিশ্চিত করেছেন যে, সীমান্তের ওপার থেকে লং ড্রাইভ শেষ করে অস্ট্রিয়ায় এসে তাদের আর বেঁচে থাকার কোন সম্ভাবনা ছিল না।
একটি ছোট বাসে তারা গাদাগাদি করে ২৮ জন ছিল।পুলিশ বাকী ২৬ জনকে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজতে নিয়ে নিয়েছেন। বুর্গেনল্যান্ড পুলিশের মুখপাত্র আরও জানান,অস্ট্রিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর সৈন্যরা সিগেনডর্ফার পুসতা (আইসেনস্টাড্ট- উমেজবং জেলা) -তে একটি ছোট পণ্যবাহী মিনিবাসকে সন্দেহ করে থামার নির্দেশ দিলে চালক কিছু দূর যেয়ে গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়।পরে অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী ও পুলিশ একটি বড় আকারের অভিযান শুরু করলে গাড়ির ভিতরে ২ জনের মরদেহ সহ ২৬ জন শরণার্থীকে উদ্ধার করেন।
এই অবৈধ অনুপ্রবেশারীদের পাচারে হাঙ্গেরির স্থানীয় চোরাকারবারিরা জড়িত আছে বলে পুলিশ সন্দেহ করছেন। যাত্রার আগেও শরণার্থীদের অবস্থা খারাপ ছিল বলে জানা গেছে। পুলিশ আরও জানায়, মৃত্যুর আগে ভ্রমণের আগে দুজনের শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল। মৃত দুইজন অভিবাসীদের বয়স ২৫ থেক ৩০ বছরের মধ্যে বে জানা গেছে। তারা কোন দেশের নাগরিক তা পুলিশ জানায় নি। পুলিশ আরও জানায় উদ্ধারকৃত বাকী ২৬ জন শরণার্থীর শারীরিক অবস্থার ভালো ছিল।পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে প্রাথমিক শারীরিক চেক আপ করিয়ে পানি পান করান।এই অভিবাসীদের মধ্যে কোন মহিলা বা শিশু ছিল না।

পুলিশের মুখপাত্র এপিএ কে বলেন, দুই জন শরণার্থীর মৃত্যুর সঠিক কারণ মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত জানা যায় নি।তাদের মরদেহ মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য পুলিশের ফরেনসিক বিভাগের হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পুলিশ প্রথমে ধারণা করেনি যে ২০১৫ সালের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
অস্ট্রিয়ার ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিসের চোরাচালানের অপরাধ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান জেরাল্ড টাটজগার্ন বলেন, “আমরা আরও খারাপ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি।” অভিযান এখনও চলছে এবং হাঙ্গেরীয় কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে রয়েছেন।অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে হাঙ্গেরির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পুলিশের একজন মুখপাত্র এপিএকে বলেছেন, অভিবাসীদের মধ্যে সম্ভবত সিরিয়ান ও ইরাকী কুর্দি নাগরিকরা সংখ্যায় বেশী ছিলেন এবং গাড়িতে মহিলা বা শিশু ছিল না। তবে তিনি এখনও বলতে পারেননি যে মারা যাওয়া দুই ব্যক্তির জাতীয়তা কি বা তারা কোন দেশের নাগরিক গ্রেফতারকৃতদের মঙ্গলবার দুপুরে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল যে, টগ রাইডের সময় কি ঘটেছিল।এই জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে একজন দোভাষীর সাহায্য সাহায্য নেয়া হয়েছিল।
ঘটনার পরপরই অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী ও সীমান্ত পুলিশরা বুর্গেনল্যান্ড রাজ্যের Siegendorfer Puszta এর আশেপাশের এলাকা অনেকাংশে বন্ধ করে দেয়।অভিবাসীদের বহণকারী ব্যক্তির খোঁজে সীমান্ত এলাকায় পুলিশের হেলিকপ্টার এবং কুকুর দিয়ে জঙ্গলে খোঁজা হয়েছিল।পুলিশ ধারণা করেছে যে, সে সশস্ত্র হতে পারে।
এই ঘটনায় রাজ্যের গভর্নর ডসকোজিল (SPÖ) হতবাক হয়ে যান এবং বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।বুর্গেনল্যান্ডের গভর্নর হ্যান্স পিটার ডসকোজিল এই ঘটনায় মর্মাহত এবং গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি স্থানীয় এক সম্প্রচার কেন্দ্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,২০১৫ সালে Parndorf এ ৭১ জন শরণার্থীর মৃত্যুর ট্র্যাজেডির সমান্তরাল ভয়ঙ্কর এবং আবারও সংগঠিত চোরাচালান অপরাধের সম্পূর্ণ বর্বরতা এবং অমানবিকতা দেখায়।” আজকের ঘটনাটি তাকে আরও একবার স্পষ্ট করে দেয় যে অস্ট্রিয়ান আশ্রয় ও অভিবাসন নীতি ২০১৫ সালের ঘটনা থেকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। তিনি আশ্রয় ব্যবস্থার একটি প্যান-ইউরোপীয় সংস্কারের আহ্বান জানান, যা ইউরোপের বাইরে আশ্রয়ের প্রক্রিয়াগুলিকে সক্ষম করে এবং এইভাবে বিপদজনক অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করে।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ২,৫৯০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন।রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩৫০ জন।
অস্ট্রিয়ার অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে আজ NÖ রাজ্যে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৭০২ জন, OÖ রাজ্যে ৫৮৭ জন, Salzburg রাজ্যে ২৭৬ জন, Steiermark রাজ্যে ২৪৩ জন, Tirol রাজ্যে ২২৮ জন, Kärnten রাজ্যে ৮৬ জন, Burgenland রাজ্যে ৬৪ জন এবং Vorarlberg রাজ্যে ৫৪ জন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে মাত্র ৫,৯১৮ ডোজ এবং মোট টিকাদানের পরিমাণ ১,১০,২৫,৭৩০ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৪ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬১,৯ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৮০,২৬৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১,১৯৬ জন।করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৭,৪৫,৮৯৯ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৩,১৭৪ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আছেন ২১৯ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯৩৪ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,782 total views, 1 views today