অস্ট্রিয়ায় আজ করোনার দৈনিক সংক্রমণ গত মার্চ মাসের পর সর্বোচ্চ ৩,৭২৭ জন
১লা নভেম্বর থেকে অস্ট্রিয়ায় কর্মস্থলে করোনার ৩জি (3G) নিয়ম বাধ্যতামূলক! যাদের সনদ থাকবে না, তাদের জন্য সম্পূর্ণ সময় এফএফপি২ মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক
ইউরোপ ডেস্ক থেকে, কবির আহমেদঃ আজ অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যৌথ নিয়মিত করোনার ব্রিফিংয়ে চোখ কপালে উঠার মত তথ্য জানানো হয়েছে।গত মার্চ মাসের পর আজ অস্ট্রিয়ায় করোনার দৈনিক সংক্রমণ সর্বোচ্চ ৩,৭২৭ জন শনাক্ত করা হয়েছে। আজ ফেডারেল রাজ্য সমূহের মধ্যে Oberösterreich রাজ্যে নতুন সংক্রমণ এক হাজারের উপরে উঠে গেছে।
এদিকে আজ ভিয়েনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.ভল্ফগাং মুকস্টাইন (Greens) ঘোষণা করেছেন আগামী ১লা নভেম্বর ২০২১ সাল থেকে অস্ট্রিয়ায় কর্মস্থলে ৩-জি (3G) নিয়ম বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন যদি কর্মস্থলে অন্য ব্যক্তির সাথে শারীরিক যোগাযোগের বিষয়টি এড়ানো সম্ভব না হয়,তাহলে সেখানে ৩-জি নিয়ম অবশ্যই মানতে হবে।
এর ফলে অস্ট্রিয়ায় আগামী ১লা নভেম্বর থেকে শুধুমাত্র তারাই কাজে যোগদান করতে পারবেন, ১. যাদের করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া আছে, ২. যাদের করোনা পরীক্ষার সনদ আছে, (এন্টিজেন টেস্ট ২৪ ও পিসিআর ৪৮ ঘন্টা) ৩. করোনা থেকে আরোগ্য লাভের সনদ। ( ৬ মাস পর্যন্ত) ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভল্ফগ্যাং মুকস্টাইন আরও জানান এই নিয়ম প্রাথমিকভাবে দুই সপ্তাহের জন্য অর্থাৎ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছে। যদি এই সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে কেহ ৩-জি নিয়মের সনদ দেখাতে ব্যর্থ হয়,তাহলে তাকে কর্মস্থলে থাকাকালীন সম্পূর্ণ সময় এফএফপি২ মাস্ক পড়ে থাকতে হবে। আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রিয়ার শ্রমমন্ত্রী মার্টিন কোচার (ÖVP)।
সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে করোনার এই তৃতীয় পরিমাপ অধ্যাদেশ (যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গেজেট আকারে জারি করা হবে) অনুসারে, যারা তাদের দৈনন্দিন কাজে অন্য মানুষের সংস্পর্শে আসে তাদের জন্য এই ৩জি(3G) প্রমাণ বাধ্যতামূলক – উদাহরণস্বরূপ অফিসে বা ক্যান্টিনে।
তবে কিছুটা ব্যতিক্রম হলেন,ট্রাক চালকরা যারা তাদের গাড়িতে একা থাকে তাদের জন্য ৩জি নিয়ম বাধ্যতামূলক না। স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা খাতে কর্মচারীদের জন্য প্রবিধানগুলিও অভিযোজিত হচ্ছে: প্রাসঙ্গিক ৩জি প্রমাণ পাওয়া গেলে এই কর্মক্ষেত্রগুলিও প্রবেশ করা যেতে পারে। উভয় পক্ষ – মালিক এবং কর্মচারী – এই নিয়ম মেনে চলার জন্য দায়ী।
১লা নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে যাদের ৩জি সনদ থাকবে তাদের আর বাধ্যতামূলক এফএফপি২ মাস্ক পড়তে হবে না। তবে সুপারমার্কেট,বিভিন্ন দোকানপাটে, বয়স্ক লোকের নার্সিংহোমে এবং হাসপাতালে কর্মরত সকলের অব্যাহত এফএফপি২ মাস্ক পড়তে হবে।
শ্রমমন্ত্রী মার্টিন কোচার (ÖVP) বলেন, “এটা হতে পারে না যে আপনাকে কর্মক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে।” কোচার একটি “ব্যবহারিক প্রতিবেদন” সম্পর্কে সন্তুষ্ট ছিলেন যা “মানুষের সুরক্ষা” নিশ্চিত করে।
তিনি আরও বলেন,এই ৩জি নিয়ম মেনে চলার জন্য মালিক এবং কর্মচারী উভয়েই দায়বদ্ধ থাকবেন। সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তারা প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। এটি উদ্দেশ্য নয় যে প্রবেশের সময় নির্বিঘ্ন নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত, তবে এলোমেলো চেকগুলি ব্যাখ্যা করেছেন কোচার। কোভিড ব্যবস্থা আইন অনুযায়ী সরকারের এই আইন লঙ্ঘনের জরিমানা হতে পারে: শ্রমিক বা কর্মচারীদের জন্য €৫০০ ইউরো পর্যন্ত এবং নিয়োগকর্তা, প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের মালিকের জন্য জরিমানার পরিমাণ €৩,৬০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩,৩২৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৭১৪ জন।
অস্ট্রিয়ার অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে Oberösterreich(OÖ) রাজ্যে আজ ১,১৭৭ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন। তারপরের স্থানে আছে Steiermark রাজ্যে ৫১৬ জন,NÖ রাজ্যে ৫০৮ জন, Salzburg রাজ্যে ২৯৬ জন,Tirol রাজ্যে ২৩৯ জন, Kärnten রাজ্যে ১১৩ জন,Vorarlberg রাজ্যে ১১০ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৫৪ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ১০,৪৯৩ ডোজ এবং মোট দেয়া হয়েছে ১,১০,৩৬,২২৩ ডোজ।অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৫ লাখ ৩২ হাজার ১৬৯ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬১,৯ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৮৩,৯৯৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১,২০৯ জন।করোনার থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৭,৪৮,২৫০ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৪,৫৩৭ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২১৮ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯৬২ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।