ভিয়েনায় করোনার নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কাউন্সিলর

সিনেমা,থিয়েটার ও ছোট-খাট অনুষ্ঠানেও এখন থেকে করোনার ২জি নিয়ম বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ এই সমস্ত ইভেন্টে তারাই অংশগ্রহণ করতে পারবে,যারা টিকা নিয়েছেন অথবা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন
ইউরোপ ডেস্ক থেকে কবির আহমেদঃ আজ অস্ট্রিয়ার রাস্ট্রায়ত্ব টেলিভিশনের সংবাদ বিষয়ক বিভাগ ZIB জানিয়েছে ভিয়েনার স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সিলর পিটার হ্যাকার (SPÖ)ঘোষণা করেছেন ভিয়েনার সিনেমা,থিয়েটার সহ সকল ধরনের ছোট অনুষ্ঠান অর্থাৎ সকল প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এখন থেকে ৩-জি নিয়মের পরিবর্তে ২-জি (2G) চলবে। তবে ২-জি নিয়ম যথাযথভাবে পালন করলে এফএফপি২ মাস্ক না পড়লেও চলবে। তবে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ২,৫- জি(2,5G) নিয়ম প্রযোজ্য থাকবে। অর্থাৎ করোনার প্রতিষেধক টিকা,করোনার থেকে সুস্থতা সনদ এবং পিসিআর টেস্ট। এখানে তাদের জন্য এন্টিজেন টেস্ট বাতিল হওয়ায় ২,৫ জি নিয়ম হয়েছে।
এদিকে অস্ট্রিয়ার প্রধান বিরোধীদল SPÖ দেশে একটি স্থায়ী সঙ্কট ও দুর্যোগ কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানিয়েছে। SPÖ এর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা রবার্ট লাইমার আজ এক বিবৃতিতে এ দাবীর কথা জানান।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন দেশে সঙ্কট ও দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্র স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে আসন্ন জাতীয় দিবসের ছুটি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে SPÖ দলের প্রতিরক্ষা মুখপাত্র রবার্ট লাইমার এই বিবৃতি দিয়েছেন। উল্লেখ্য ২৬ অক্টোবর অস্ট্রিয়ার জাতীয় স্বাধীনতা দিবস।
বিরোধীদলের এই নেতা বলেন “একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান নানাবিধ হুমকির পরিস্থিতিতে অস্ট্রিয়াকে আরও প্রতিরোধী হতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন স্পষ্ট হুমকির চিত্র, স্পষ্ট দায়িত্ব এবং পরিষ্কার পরিচালনা ও পরিকল্পনা। করোনা মহামারীতে আমাদের বারবার যে বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা এখন আমরা আর বহন করতে বা মেনে নিতে পারছি না।” তিনি আরও বলেন এই সঙ্কট ও দুর্যোগকালীন কেন্দ্র অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে অবস্থিত হওয়া উচিত।

এপিএ বলেন,SPÖ নেতা লাইমার একটি জাতীয় সঙ্কট এবং পরিস্থিতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন, যা ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে অবস্থিত হওয়া উচিত। তিনি একটি রূপরেখা দিয়ে বলেন,এই সঙ্কট ও দুর্যোগ কমিটিতে দেশের সমস্ত প্রাসঙ্গিক বিভাগের প্রতিনিধি, সম্প্রদায় এবং রাষ্ট্রের প্রতিনিধি এবং সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকবে। তাদের এই প্রতিষ্ঠান স্বাধীন হতে হবে যেন তারা অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারে।
ফলে যখন দেশে কোন সঙ্কট বা দুর্যোগ তৈরি হবে তখন তারা দ্রুত একত্রিত হয়ে সঙ্কট ও দুর্যোগ মোকাবেলায় তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে বেসামরিক জনসংখ্যার ব্যাপক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।”প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, ব্ল্যাকআউট এবং সাইবার আক্রমণের মতো ব্যাপক হুমকির সময়ে, প্রতিক্রিয়াগুলিও ব্যাপকভাবে সমন্বিত হতে হবে,” লাইমার বলেছিলেন।
কমিউনিটি পর্যায়ে, লাইমার স্থানীয় স্থিতিস্থাপকতা ব্যবস্থাপক স্থাপন করতে পরামর্শ দিয়েছেন যাতে তারা স্থানীয় নেতাদের সমর্থন করতে পারে এবং জরুরি অবস্থার জন্য জনসংখ্যাকে অবহিত এবং প্রস্তুত করতে পারে। যদি এটি ঘটে থাকে, তারা গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় এবং যোগাযোগের কাজগুলিও গ্রহণ করতে পারে। “জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগের প্রথম বিন্দু হিসাবে, স্থিতিস্থাপকতা পরিচালকরা পরিস্থিতি কেন্দ্র এবং বেসামরিক জনসংখ্যার মধ্যে সংযোগের প্রতিনিধিত্ব করে। সম্প্রদায়ের স্তরে, এটি সঙ্কট এবং বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সমাজের প্রতিরোধকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে,” লাইমার বলেছেন।
লাইমার অবশেষে অস্ট্রিয়ার ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে লোক দেখানো রাজনীতির পরিবর্তে পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন বর্তমান সরকার এক বছর আগে একটি সঙ্কট ও দুর্যোগ সুরক্ষা আইন ঘোষণা করেছিল। “আবারও এটি অনেক গরম বাতাসে পরিণত হয়েছে, আজ অবধি আমরা একটি আইনী প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছি।”
অস্ট্রিয়ায় করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে সংক্রমণের বিস্তার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন গত এক সপ্তাহে অস্ট্রিয়ায় আকস্মিক ও উদ্বেগজনক হারে করোনার নতুন সংক্রমণের বিস্তার লাভ করেছে। গত এক সপ্তাহে অস্ট্রিয়ায় প্রায় ২০,০০০ হাজার মানুষ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন। অবশ্য এর মধ্যে সিংহভাগই করোনার প্রতিষেধক টিকা নেয় নি।
অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যম আরও জানিয়েছেন বর্তমানে আইসিইউতে রোগী এবং করোনায় মৃত্যুবরণের শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষই করোনার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করেন নি। করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করার পরেও যারা সংক্রমিত হচ্ছেন তারা সাধারণত হালকা উপসর্গ নিয়ে নিজ বাসাতেই আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩,৬২৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৪৯১ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৮৭০ জন,OÖ রাজ্যে ৭৬৬ জন, Steiermark রাজ্যে ৫২১ জন,Salzburg রাজ্যে ৩৩৫ জন,Tirol রাজ্যে ২০৭ জন, Kärnten রাজ্যে ২০৭ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১৭১ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৫৬ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ১০,৫৯৪ ডোজ এবং এই পর্যন্ত মোট করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ১,১০,৯০,৭৬৮ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৪১ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬২,৩ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৯৮,৬০৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭,৫৬,১২১ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩১,২৩৪ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আইসিইউতে আছে ২১৯ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,০৩৫ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,701 total views, 1 views today