রাজধানী ভিয়েনা ও বুর্গেনল্যান্ড ব্যতীত সমগ্র অস্ট্রিয়াকে করোনার লাল জোন ঘোষণা

এই সপ্তাহে ভিয়েনা কমলা জোনেই থাকছে,বুর্গেনল্যান্ড  রাজ্যকে হলুদ থেকে কমলা জোনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে

 কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে অস্ট্রিয়ার করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে আজ ভিয়েনা ও বুর্গেনল্যান্ড রাজ্য ব্যতীত প্রায় সমগ্র অস্ট্রিয়াকেই করোনা ভাইরাসের অতি ঝুঁকিপূর্ণ লাল জোন ঘোষণা করেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন সংক্রমণের বিস্তার এইভাবেই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী সপ্তাহে সমগ্র অস্ট্রিয়াই করোনার লাল জোন ঘোষণা করা হতে পারে। করোনার লাল জোন ঘোষণার পর পরই Vorarlberg রাজ্য প্রশাসন স্কুলে পুনরায় করোনা পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে।

এপিএ আরও জানিয়েছে, দেশে পুনরায় করোনার সংক্রমণের বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাফিক লাইট কমিশন সরকারকে ধাপে ধাপে পরিকল্পিত ব্যবস্থা কার্যকর করার সুপারিশ করেছে। বিভিন্ন রাজ্য সরকারও ইতিমধ্যেই করোনার বিধিনিষেধ পুনরায় ফিরিয়ে আনছে। আজ অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য OÖ এ সর্বত্র এফএফপি২ মাস্ক বাধ্যতামূলক করেছে। তবে অনেক সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা সমগ্র দেশেই এফএফপি২ মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করার জন্য ফেডারেল সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন।

APA দ্বারা উপস্থাপিত মূল্যায়নগুলির মধ্যে একটি বিশেষভাবে একট দেশব্যাপী FFP2 প্রবিধান প্রবর্তনের সমর্থন করে।  টিকা দেওয়ার লক্ষ্য অর্জন শিথিলকরণের ভিত্তি হিসাবে কাজ করতে পারে।  কমিশনের মূল্যায়ন অনুসারে, সংক্রমণের ঝুঁকি বর্তমানে প্রায় সারা দেশেই খুব বেশি, বার্গেনল্যান্ড এবং ভিয়েনায় এটি “কেবল” বেশি।

অস্ট্রিয়ার করোনা কমিশনের মতে, সাধারণ ওয়ার্ডে কি ঘটছে সেদিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে হাসপাতাল ও আইসিইউর উপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। আইসিইউর উপর চাপ বাড়লে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।

করোনা কমিশন জানিয়েছে এই সপ্তাহে ভিয়েনায় প্রতি ১,০০,০০০ লাখ জনপদে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত ৮১,৫ জন এবং বুর্গেনল্যান্ডে ৭৮,৫ জন। ফলে পূর্বাঞ্চলের এই দুই রাজ্য এই সপ্তাহে কমলা জোনেই থাকছে। অস্ট্রিয়ার বাকী সকল ফেডারেল রাজ্যেই করোনার নতুন সংক্রমণ প্রতি একলাখ জনপদে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ জন। তাই ৭ টি ফেডারেল রাজ্যই এই সপ্তাহে করোনার সংক্রমণের অতি ঝুঁকিপূর্ণ লাল জোন স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ফলে অস্ট্রিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলই এখন করোনার সংক্রমণের বিস্তারের অতি ঝুঁকিপূর্ণ লাল জোনে।

এদিকে আজ অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.ভল্ফগাং মুকস্টাইন জানিয়েছেন,যারা এখনও করোনার প্রতিষেধক টিকা নেয় নি তাদের বাসায় অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যবীমা থেকে সতর্কীকরণ চিঠি পাঠানো হবে।

অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন সংক্রমণের বিস্তার বৃদ্ধির সাথে সাথে আইসিইউ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। সংবাদ মাধ্যম আশঙ্কার করছেন সপ্তাহের শেষে অস্ট্রিয়ায় করোনার আইসিইউ রোগী ৩০০ শত হয়ে যেতে পারে।

আর যদি তাই হয়,তাহলে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী অস্ট্রিয়ায় দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে।করোনার আইসিইউ রোগী ৩০০ শত হলে,যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা নেয় নি তাদের জন্য রাতের গ্যাস্ট্রনমি সহ সকল ইভেন্ট নিষিদ্ধ এবং বাসার করোনা পরীক্ষা আর গ্রহণ করা হবে না। অর্থাৎ করোনা পরীক্ষা শুধুমাত্র ফার্মেসী, হাসপাতাল বা অন্যান্য নিবন্ধিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে করতে হবে।

আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৪,২৪৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৭ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৪২৪ জন।

অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ১,২৬৯ জন, NÖ রাজ্যে ৭৮৯ জন, Steiermark রাজ্যে ৪৫৮ জন,Tirol রাজ্যে ৩৮১ জন, Salzburg রাজ্যে ৩৬১ জন, Kärnten রাজ্যে ৩২৫ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১৩৪ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১১০ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ১৫,০৭৯ ডোজ এবং মোট দেয়া পরিমাণ ১,১১,২৩,৩৬২ ডোজ।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৭ লাখ ২ হাজার ৩৬ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৩,৮ শতাংশ।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮,১৩,৩৩৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১,৩১৬ জন। করোনার থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন ৭,৭৫,৩৮৫ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৬,৬৩৩ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২৬৫ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,২৮৯ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

 

 14,706 total views,  1 views today