অস্ট্রিয়ায় করোনা পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতি

২০২০ সালের নভেম্বর মাসের পর আজ সর্বোচ্চ আক্রান্ত শনাক্ত। Tirol রাজ্য সরকার করোনার নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার করোনা পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিচ্ছে। গত সপ্তাহে অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের বুর্গেনল্যান্ড রাজ্যের গভর্নর ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজ্যের করোনার অবস্থা উত্তরোত্তর ভালো হওয়ায় তিনি শীঘ্রই সকল প্রকার বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিবেন। কিন্ত এই সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে বুর্গেনল্যান্ড রাজ্য হলুদ জোন থেকে পুনরায় কমলা জোনে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার স্থগিত হয়ে গেছে।
এদিকে গতকাল অস্ট্রিয়ার ট্রাফিক লাইট কমিশন অস্ট্রিয়ার পশ্চিমের রাজ্য Tirol কে “লাল জোন” ঘোষণার পর এবং মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ৭৩৮ জন করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন রাজ্য প্রশাসন। Tirol রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সিলর Annette Leja (ÖVP) আজ রাজধানী Innsbruck এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে করোনার নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করেন।
স্বাস্থ্য কাউন্সিলর জানিয়েছেন আগামী ৪ নভেম্বর থেকে Tirol রাজ্যে সকল প্রকার কেনাকাটায় FFP2 মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক এবং রাতের গ্যাস্ট্রনমিতে 2G নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী ৪ নভেম্বর থেকে সমগ্র Tirol রাজ্যের রাতের গ্যাস্ট্রনমি সহ সকল প্রকার রাত্রিকালীন ইভেন্টে শুধুমাত্র তারাই অংশগ্রহণ করতে পারবেন যাদের করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া আছে বা করোনার থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন। ফলে ৮ নভেম্বর থেকে এই রাজ্যে রাত্রিকালীন ইভেন্টে করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট বা সনদ বাতিল করা হল।
অস্ট্রিয়ার ফ্রি মেট্রো পত্রিকা Heute জানিয়েছে আজ শুক্রবার ২৯ অক্টোবর বিকালে অস্ট্রিয়ার Oberösterreich(OÖ) রাজ্য প্রশাসনও আগামী ৮ নভেম্বর থেকে রাতের গ্যাস্ট্রনমি সহ সকল ইভেন্টে করোনার 2G নিয়ম বাধ্যতামূলক করার কথা ঘোষণা করেছে।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে দেশে করোনার সংক্রমণের বিস্তার অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ায় গতকাল অস্ট্রিয়ার করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন ভিয়েনা ও বুর্গেনল্যান্ড রাজ্য ব্যতীত সমগ্র দেশকেই করোনার সংক্রমণ বিস্তারের অতি ঝুঁকিপূর্ণ লাল জোন ঘোষণা করেছে। করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন দেশে পর্যাপ্ত করোনার প্রতিষেধক টিকা থাকা সত্ত্বেও মানুষ কম গ্রহণ করায় করোনার চলমান চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে এই অবনতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান। কমিশন সরকারকে দেশের সর্বত্র FFP2 মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছে।

আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৫,৮৬১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৮৬৪ জন।
অস্ট্রিয়ার অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ১,৪৬৯ জন, NÖ রাজ্যে ১,২৭৩ জন, Steiermark রাজ্যে ৬৮৫ জন, Salzburg রাজ্যে ৫৬২ জন, Tirol রাজ্যে ৩৫৭ জন, Vorarlberg রাজ্যে ২৮৯ জন, Kärnten রাজ্যে ২৬০ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১০২ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে আজ সমগ্র দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে মাত্র ১৩,৪০৪ ডোজ এবং এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকাদানের মোট পরিমাণ ১,১১,৩৮,০৭১ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন ৫৭ লাখ ৯ হাজার ১৭২ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৩,৯ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮,১৯,১৯৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১,৩৩৩ জন। করোনার থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন ৭,৬৮,০১৯ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৯,৮৪৩ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২৮০ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৩৭০ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,693 total views, 1 views today