আগামী রবিবার অস্ট্রিয়ার ফেডারেল সরকারের সাথে পুনরায় বৈঠকে বসছে দেশের ৯ রাজ্যের গভর্নর

অস্ট্রিয়ার রেড ক্রস প্রধান সমগ্র দেশে সকলের জন্য লকডাউন ঘোষণার দাবি করেছেন
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে অস্ট্রিয়ায় করোনা ভাইরাসের চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে সংক্রমণের বিস্তারের বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সংক্রমণের বিস্তার বৃদ্ধির সাথে সাথে হাসপাতাল ও আইসিইউর উপরও ক্রমশ চাপ।বাড়ছে। তাছাড়াও সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।
অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যম ঈন্গিত দিয়েছেন রবিবারের এই শীর্ষ সম্মেলনে দেশের টিকা না দেওয়া লোকদের জন্য দেশব্যাপী লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। আজ অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ (ÖVP) অস্ট্রিয়ার পশ্চিমের আল্পস পর্বতমালার রাজ্য Tirol রাজ্যের রাজধানী Innsbruck সফররত অবস্থায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান,আগামী বুধবার থেকে টিকা না দেওয়া ব্যক্তিদের জন্য দেশব্যাপী একটি লকডাউন আসতে পারে। তবে তিনি জানান,রবিবার সমস্ত ফেডারেল রাজ্য গভর্নরদের সাথে এক জরুরী বৈঠকে সমগ্র “দেশব্যাপী” একই ব্যবস্থা টিকাবিহীনদের জন্য একটি লকডাউন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে। চ্যান্সেলর আরও বলেন,স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুকস্টাইন ইতিমধ্যেই দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছেন।
সরকার প্রধান আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ (ÖVP) টিকাহীন ব্যক্তিদের জন্য লকডাউনের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী দিয়েছেন। শ্যালেনবার্গ শুক্রবার ইনসব্রুকে “ব্ল্যাকআউট” অনুশীলনের একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে তারা এই রবিবার এই জাতীয় লকডাউনের জন্য “সবুজ আলো” দিতে চেয়েছিলেন। এর আগে, সপ্তাহান্তে গভর্নরদের সাথে একটি ভার্চুয়াল সম্মেলন এবং রবিবার জাতীয় কাউন্সিলের মূল কমিটির বৈঠক হবে। টিকাহীন লোকদের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন তারপর বুধবার থেকে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
শুক্রবার Tirol রাজ্যের প্যাটসেরকোফেলের পাদদেশে একটি সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেল চ্যান্সেলর আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ এই কথা জানিয়েছেন এবং একই দিনে জাতীয় কাউন্সিলেও (সংসদে) এই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের কথা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে,Tirol রাজ্যের গভর্নর গুন্থার প্ল্যাটারের (ÖVP) সাথে তার আজকের বৈঠকটি ছিল ব্ল্যাকআউট অনুশীলন সম্পর্কে।
যে কোনো ক্ষেত্রে, তিনি একটি “দেশব্যাপী” সমাধান চেয়েছিলেন, শ্যালেনবার্গ বলেছেন। আবারও, চ্যান্সেলর একটি সাধারণ লকডাউন দিয়েছেন – যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে এবং যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন – একটি স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান: যারা টিকা দেওয়ার মাধ্যমে ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতেন তাদের রক্ষা করতে হবে। লকডাউনে যাওয়ার অর্থে টিকাবিহীনদের সাথে কোনও “সংহতি” হওয়া উচিত নয়।
অস্ট্রিয়ার রাস্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন জানিয়েছেন, আজ অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য করোনার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছেন।টেলিভিশন আরও জানায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. ভল্ফগাং মুকস্টাইন (গ্রিনস) আরও বলেন, যেহেতু দেশে করোনার নতুন সংক্রমণের বিস্তার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই যার সম্ভব হয় ঘরে থেকে অতিসত্তর হোম অফিস করার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ার রেড ক্রস প্রধান গেরি ফয়েটিক এক টুইট বার্তায় সরকারকে অস্ট্রিয়ার সকলের জন্য লকডাউন ঘোষণার অনুরোধ করেছেন।তিনি দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্য দেশে পুনরায় পূর্বের মত সমগ্র দেশব্যাপী সকলের জন্যই একটি সাধারণ লকডাউন দেয়ার অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, রেড ক্রস প্রধান তিনি শুধুমাত্র ২জি নিয়ম বাধ্যতামূলক টিকাবিহীনদের উপর বিধিনিষেধের সফলতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।তিনি দেশব্যাপী সকলের জন্য সাধারণ লকডাউন ছাড়া বর্তমান সমস্যা থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আসা সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা করছেন।
আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৭৯৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,৪৪১ জন। অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ২,৯৪৫ জন,NÖ রাজ্যে ২,৩৯৪ জন,Salzburg রাজ্যে ১,৫০০ জন,Tirol রাজ্যে ১,০৫৪ জন,Kärnten রাজ্যে ৯৪৫ জন,Steiermark রাজ্যে ৫৯৫ জন,Vorarlberg রাজ্যে ৫৭৮ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৩৪৬ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ২৬,৫২৩ ডোজ এবং মোট টিকাদানের পরিমাণ ১,১৩,৮৪,৭৪৪ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫৮ লাখ ৪ হাজার ৯৫৫ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯,৩৪,৯৪৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১,৬৪১ জন।করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ৮,২৪,৫৯০ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯৮,৭১৭ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৩৬ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,২৯৪ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,738 total views, 1 views today