পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী Mateusz Morawiecki ইইউকে তার সীমানা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন

পোল্যান্ড দিয়ে ইইউতে প্রবেশের অপেক্ষায় লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশী সম্পর্কে ইইউকে সতর্ক করেছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স,এএফপি ও বিবিসি জানিয়েছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী Mateusz Morawiecki ইইউকে কঠোরভাবে তার সীমানা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। বেলারুশ ও পোল্যান্ড সীমান্তে অবস্থানরত অভিবাসন প্রত্যাশী সংকটে পোল্যান্ড বর্তমানে প্রচন্ড চাপের মধ্যে রয়েছে।পোল্যান্ড ইতিমধ্যেই তার সীমান্তে শত শত অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।
জার্মানির দৈনিক Bild পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি বলেন,”আমরা যদি এখনই হাজার হাজার অভিবাসীকে দূরে রাখতে না পারি, তাহলে শীঘ্রই তা কয়েক হাজারে এবং লাখে লাখে উন্নীত হয়ে যেতে পারে।তিনি আরও জানান,তার দেশ বর্তমানে বেলারুশের সাথে তার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে প্রমাণ করছে যে পোল্যান্ড তার কার্যকর সীমান্ত সুরক্ষা করতে পারে। আমাদের সেনাবাহিনীর কঠোর পাহারার ফলে প্রতি রাতে ও দিনে হাজার চেষ্টা করেও কেহ অবৈধভাবে পোল্যান্ডে তথা ইইউতে প্রবেশ করতে পারছে না।
তার মতে, বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরে ইইউ-এর বাহ্যিক সীমানা এবং পূর্বদিকে অভিবাসন থেকে রক্ষায় জার্মানির বিশেষ আগ্রহ থাকা উচিত৷ ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটে বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের পদক্ষেপের সাথে, মোরাউইকি কঠিন হয়েছিলেন। “এটি ইউরোপ এবং বিশ্বের জন্য একটি বিপজ্জনক নীতি ছিল,” তিনি সমালোচনা করেন। “এটি অনেক ইউরোপীয় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছে এবং একটি কৃত্রিম বহুসংস্কৃতিবাদ তৈরি করেছে।”
উল্লেখ্য যে,বর্তমানে বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে বেলারুশে ও দুই দেশের জিরো পয়েন্টে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা থেকে আগত অভিবাসন প্রত্যাশীরা ইইউতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সরকারী তথ্য অনুসারে, পোল্যান্ড এখন এই অঞ্চলে ২০,০০০ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করেছে যাতে অবৈধ প্রবেশ ঠেকানো যায়।
উপরন্তু, “Bild” পত্রিকা অনুসারে Morawiecki নতুন জার্মান ফেডারেল সরকারকে অবিলম্বে বাল্টিক সাগরের গ্যাস পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ২ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। “আমরা এখানে পোল্যান্ডে ইইউ সীমান্ত রক্ষা করছি এবং যদি আমরা বড় ছবি সম্পর্কে কথা বলি: আসুন। শান্তির জন্য একসাথে কাজ করুন এবং ভ্লাদিমির পুতিনকে শক্তি প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দেবেন না যাতে তিনি আপগ্রেড চালিয়ে যেতে পারেন।” এর মানে অবশ্যই নতুন গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত।
এদিকে জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে (DW) ও ইউরোপের অভিবাসন প্রত্যাশীদের সম্পর্কিত অনলাইন পোর্টাল ইনফোমাইগ্রেন্টস জানিয়েছেন বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে আটকে পড়া অভিবাসীদের ইউক্রেন সাময়িকভাবে আশ্রয় দিতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ৷তবে দেশটির রাজধানী কিয়েভে এই বিষয়ে সমর্থন তেমন একটা নেই৷
জার্মানির এক সংসদ সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বহিঃসীমান্তে অবস্থানরত অভিবাসীদের ইউক্রেনে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়ার পর থেকে কিয়েভে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে৷ ইইউ এই অভিবাসীদের আশ্রয়ের আবেদন যাচাই বাছাই করার সময়টাতে তাদের কিয়েভে রাখার কথা চিন্তা করা হচ্ছে৷ তবে, এই বিষয়ে বার্লিন বা ব্রাসেলস এখনো ইউক্রেনের নেতৃত্বের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেনি৷
ইইউ-তুরস্ক চুক্তির মতো পরিকল্পনা ? জার্মানির মধ্য বামপন্থি দল এসপিডির সাংসদ নিলস স্মিডের এই প্রস্তাব অবশ্য একেবারে অভিনব নয়৷বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই ইউরোপীয়ান স্ট্যাবিলিটি ইনেশিয়েটিভ (ইএসআই) থিঙ্ক ট্যাংকের প্রধান গেরাল্ড ক্নাউস একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ এই সংস্থাটি ২০১৬ সালে অভিবাসন বিষয়ক ইইউ-তুরস্ক চুক্তির রূপকার ছিল যেখানে ইইউতে আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের তুরস্কে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি ছিল৷ বিনিময়ে তুরস্ককে অভিবাসীদের সহায়তা দেয়ার জন্য সবমিলিয়ে ছয় বিলিয়ন ইউরো দিতে সম্মত হয় ব্রাসেলস৷
ক্নাউস মনে করেন, একই ধরনের ব্যবস্থা বেলারুশ ইস্যুতেও করা যেতে পারে৷ তবে দেশটির ক্ষমতাশালী শাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো এধরনের কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে রাজি হবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে এই বিশেষজ্ঞের মনে৷ ‘‘সেক্ষেত্রে পূর্ব ইউরোপের যেসব গণতন্ত্র ইউরোপের দিকে তাকিয়ে আছে এবং মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দিতে চায় এরকম কারো সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করা যেতে পারে৷মলদোভা, জর্জিয়া বা ইউক্রেন এরকম কোনো দেশ হতে পারে,’’ বলেন ক্নাউস৷
ইউক্রেন কী ভাবছে ? তবে কিয়েভ এখন অবধি বেশ ঠাণ্ডা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷ ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা পরিষদের সচিব অলেক্সি ড্যানিলভ সম্প্রতি প্রশ্ন করেছেন, ‘‘কোন ভয় এই মানুষদের নিতে আমাদের বাধ্য করবে?’’ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখিলো পোডালিয়াক ডয়চে ভেলের কাছেও একইরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি করেছেন৷ দেশটি এধরনের অভিবাসী চুক্তির পক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন তিনি৷
যেহেতু বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে জড়ো হওয়া মানুষরা আকাশপথে বেলারুশ হয়ে কিংবা রাশিয়া থেকে বিভিন্নভাবে ইইউ সীমান্ত অবধি পৌঁছাচ্ছে তাই এই সংকট সুরাহায় রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির আলোচনা করা দরকার বলে মনে করেন পোডালিয়াক৷ ‘‘জার্মানি এবং রাশিয়া অনেক বছর ধরেই অংশীদার,’’ বলেন তিনি৷ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রেও ইউক্রেনের রেকর্ড বিশেষ সুবিধার নয়৷ দেশটিতে এধরনের আবেদন যাচাই বাছাইয়ে কয়েক বছর অবধি সময় লেগে যায়৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসেব অনুযায়ী ইউক্রেনের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া মানুষের সংখ্যা দুই হাজার ২৫৫ জন৷
14,738 total views, 1 views today