পোল্যান্ড বেলারুশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টের অভিবাসীদের ঠাই এখন গুদামঘরে

কবির আহমেদ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নীচ থেকে পোল্যান্ডের সীমান্তের গুদামঘরে স্থান পাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মাঝে।ইউরোপের অভিবাসীদের সম্পর্কিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইনফোমাইগ্রেন্টস এই তথ্য জানিয়েছেন।এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এর উদ্ধৃতি দিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টস আরও জানান, পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তের জঙ্গলে এক বছর বয়সী এক অভিবাসন প্রত্যাশী সিরিয়ান শিশুর মৃত্যু হয়েছে।পোল্যান্ডের স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়টার্সকে জানান, শিশুটির পরিবার এক মাস যাবত সীমান্তের নিকটে জঙ্গলে অবস্থান করছিল।
সিরিয়া থেকে পরিবারের সাথে আসা এক বছর বয়সী শিশু বেলারুশ সীমান্তের কাছে পোল্যান্ডের একটি জঙ্গলে মারা গেছে। পোলিশ চিকিৎসাকর্মীদের মতে, এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্তে সংকট চালাকালীন অবস্থায় সবচেয়ে কম বয়সী শিশুর মৃত্যু।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বেলারুশের মধ্যে চলমান অস্থিরতার সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেশে পৌঁছানোর চেষ্টাকারী হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছেন। প্রচণ্ড ঠান্ডায় অমানেবতর জীবন যাপন করছেন তারা৷
বেলারুশের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকদের নিয়ে এসে ইচ্ছাকৃতভাবে সংকট তৈরি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পোলিশ ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টিম পিসিপিএম নামক একটি এনজিও জানিয়েছে, “মারা যাওয়া শিশুটি একটি সিরিয়ান দম্পতির ছেলে যাদেরকে তারা ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরে সহায়তা করেছিল।”
পিসিপিএম টুইটারে জানায়, “আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে আমাদের কাছে সংবাদ আসে যে, অত্যন্ত সংকটে থাকা একজন ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি, সেখানে তিনজন ব্যক্তি আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। তারা প্রায় দেড় মাস মাস ধরে জঙ্গলে ছিলেন।”
পিসিপিএম আরও জানায়, ক্ষুধার্ত এবং পানিশূন্য হয়ে গুরুতর পেট ব্যথা আক্রান্ত একজন যুবক এবং একটি সিরিয়ান দম্পতির সাথে তাদের কর্মীরা দেখা করেছেন।
“লোকটির বাহুতে একটি ক্ষত ছিল এবং নারীটির পায়ে নীচের অংশে ছুরির দাগ ছিল। তাদের এক বছর বয়সী বাচ্চা জঙ্গলে মারা গেছে।”, টুইটারে জানায় এই পোলিশ সংস্থাটি। তবে ছেলেটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে এই অঞ্চলে কমপক্ষে ১৩ জন মারা গেছে। যাদের বেশিরভাগেরই জঙ্গলে দীর্ঘদিন খাদ্য ও পানির অভাব এবং প্রচন্ড ঠান্ডায় আটকে থাকার কারণে মৃত্যু ঘটেছে।
গত কয়েকদিনে, উত্তর-পূর্ব পোল্যান্ডের বোহোনিকি গ্রামের স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় দুই নিহত অভিবাসন প্রত্যাশীর দাফন করেছে। তাদের মধ্যে একজন ১৯ বছর বয়সী সিরিয়ান আহমেদ আল-হাসানের দাফন কাজ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় সোমবার সম্পন্ন হয়। স্থানীয়রা স্কাইপের মাধ্যমে সিরিয়ায় তার পরিবারকে দাফনকাজে যুক্ত করেছিল। উল্লেখ্য, আহমেদকে ১৯ অক্টোবর পূর্ব পোল্যান্ডের বাগ নদীতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আহমেদ সাঁতার কাটতে পারতেন না৷ তাকে বেলারুশের সৈন্যরা ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছিল৷
বেলারুশের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে তার স্বৈরাচারী শাসনের উপর ইইউ নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছাকৃতভাবে শরণার্থী সংকটকে উস্কে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দাতব্য সংস্থাগুলির মতে, সাম্প্রতিক দিনগুলিতে অনেক লোক পোল্যান্ড ও বেলারুশকে পৃথক করা কাঁটাতারের বেড়া পার হতে পেরেছে।
নিরাপদ অঞ্চলের আশেপাশের জঙ্গলগুলোতে দাতব্য সংস্থা এবং ডাক্তারদের কাছে আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্যের অনুরোধ বেড়েছে। চিকিত্সকদের মতে, বর্তমানে তারা যেসব সাধারন ও জরুরী চিকিৎসা দিচ্ছেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মারধর, ডিহাইড্রেশন এবং হাইপোথার্মিয়ার আক্রান্ত অভিবাসীদের যথাসম্ভব সেবা দেয়া।
ত্রাণকর্মীরা পোলিশ সরকারের কাছে সীমান্তে আটকে পড়াদের জন্য একটি মানবিক সেতু তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা পোলিশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারে। গত কয়েকদিন ধরে ঐ অঞ্চলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যাওয়ায় চিকিৎসা অভাবে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে মাবাধিকারকর্মীদের৷
অভিবাসীদের সহায়তা কেন্দ্রের সমন্বয়কারী আনা চমিলেউস্কা বলেছেন: “এটি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।আমরা এরকম আরও দুঃখজনক খবর পাব।
14,720 total views, 1 views today