অস্ট্রিয়ায় লকডাউন শেষ, খুলছে দোকানপাট ও রেস্টুরেন্ট

 কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার নব নিযুক্ত সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার আজ অস্ট্রিয়ায় যারা টিকা গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য ১২ ডিসেম্বর লকডাউন শেষের ঘোষণা দিয়েছেন।তিনি করোনা বিরোধীদের সাথে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন।

অস্ট্রিয়ান সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন, আজ অস্ট্রিয়ার নতুন সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার ভিয়েনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে দেশের চতুর্থ লকডাউন আগামী ১২ ডিসেম্বর শেষ ঘোষণা করেছেন।তবে যারা এখনও করোনার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করেননি তাদের জন্য লকডাউন অব্যাহত থাকবে।অবশ্য তিনি যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা ও বিধিনিষেধের বিরোধীতা করছেন তাদের সাথে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন।

অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন, চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার লকডাউন শেষ ঘোষণা দিলেও কোন কোন রাজ্যে পরিস্থিতির বিবেচনায় খোলার ব্যাপারে সামান্য কিছু ভিন্নতা আছে।যেমন ভিয়েনার রাজ্য গভর্নর ও মেয়র মিখাইল লুডভিগ(SPÖ) আজ ভিয়েনার সিটি হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন ভিয়েনায় দোকানপাট ১৩ ডিসেম্বর খুললেও হোটেল-রেস্টুরেন্ট খুলবে এক সপ্তাহ পর ২০ ডিসেম্বর।

অন্যদিকে অস্ট্রিয়ায় বর্তমান সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য আপার অস্ট্রিয়ার(OÖ) প্রশাসন জানিয়েছেন যে, এই রাজ্যে লকডাউন শেষ হবে ১৭ ডিসেম্বর।

এপিএ জানান, নতুন সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার সংবাদ সম্মেলনে অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেন, তিনি একটি সংলাপ খুঁজছেন এবং তিনি করোনা ব্যবস্থার বিরোধীদের এবং সরকারের সমালোচকদের কাছে যেতে চান অর্থাৎ তাদের সাথে সংলাপে বসতে চান।নেহামারের মতে, তাদের এই বিরোধীতার ফলে “আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি করছে”।

কার্ল নেহামার বলেন, “সংলাপ কখনই শেষ হওয়া উচিত নয়।কথা বলার প্রস্তাব সবসময়ই থাকতে হবে”। মঙ্গলবার নতুন সরকার প্রধান হিসাবে তার প্রথম উদ্বোধনী সংবাদ সম্মেলনে নতুন স্টাইল দেখালেন নতুন চ্যান্সেলর।তার সুর ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

নেহামার আরও বলেন, “করোনাভাইরাস আমাদের সবার কাছে অনেক কিছু অনুভব করে”, “করোনাভাইরাস আমাদের সকলের কাছে অনেক কিছু করার প্রত্যাশা করে। (…) কেউ কেউ অভিভূত বোধ করে।”  ভাষা পরিবর্তন করা এবং একে অপরের বিরুদ্ধে থাকা থেকে একে অপরের সাথে থাকা দরকার।  “আমরা একটি সমাজ।” করোনা ভাইরাসটি আমাদের শত্রু, ভাইরাসটি আমাদের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে এবং মানুষকে হত্যা করছে।

চ্যান্সেলর নেহামারের আজকের বক্তব্য তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বক্তব্যের সম্পূর্ণ ভিন্নরুপ। এপিএ বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি বার বার করোনা ব্যবস্থার বিরোধীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ক২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে অস্ট্রিয়ায় করোনা মহামারীর শুরুতে তিনি বলেছিলেন: “যারা এতে লেগে থাকবে তারা জীবন রক্ষা করবে এবং যারা জীবনের হুমকি হয়ে উঠবে না।”

আরেকবার তিনি পুলিশের কাজকে এভাবে বর্ণনা করেছিলেন: “আমরা, তাই বলতে গেলে, ফ্লেক্স, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের জন্য দ্রুত সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙার জন্য বিভাজক প্লেট”। চ্যান্সেলর হিসাবে, নেহামার আজকের দিনে খুব আলাদা ছিলেন। চ্যান্সেলর নেহামার তার “ভয় এবং উদ্বেগ” প্রকাশ করেছেন করোনা বিরোধীদের কর্মকাণ্ডে। তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার মানুষ যারা সরকার এবং করোনা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছে “সবাই একই মতের নয়”। তাদের মাঝে অনেকেরই “ভয় ও উদ্বেগ আছে, অনেকে রাগান্বিত, দাঙ্গা করতে চাইছে, কিন্তু তারা সংখ্যালঘু”।  সরকার প্রধান হিসেবে তিনি এসব আশঙ্কা ও উদ্বেগ দূর করতে চান।  “ভাইরাসটি প্রজাতন্ত্রের ঘাড়ের চাকিতে পরিণত হওয়া উচিত নয় বলে জানান তিনি”।

নতুন সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করতে চান এবং ইতিমধ্যেই SPÖ নেত্রী পামেলা রেন্ডি-ভাগনার এবং NEOS বস বিট মেইনল-রিসিঞ্জারের পাশাপাশি ভিয়েনার মেয়র মিখাইল লুডভিগের (SPÖ) সাথে বিশ্বস্ত এবং নিবিড় আলোচনা করেছেন।অবশ্যই, তিনি একটি সাক্ষাত্কারের জন্য FPÖ বস হার্বার্ট কিকলকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে এখনও তারিখে নির্ধারিত হয় নি।

চ্যান্সেলর নেহামার আরও জানান, তার সরকার ইকো-সামাজিক ট্যাক্স সংস্কার, ডিজিটাইজেশন, নার্সিং কেয়ার সংস্কার, অর্থনৈতিক উত্থান এবং চাকরির সুরক্ষাকে আরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখার পরিকল্পনা নিয়েছে। তিনি বলেন দেশের “সমৃদ্ধিই সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি”।

এদিকে অস্ট্রিয়ায় করোনার নতুন সংক্রমণের বিস্তার অব্যাহত হ্রাস পেলেও করোনায় মৃত্যুবরণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৪,২৩৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৭ জন।আজ রাজধানী ভিয়েনায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৫৬৪ জন।

অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৬৯৮ জন, OÖ রাজ্যে ৬৯২ জন, Steiermark রাজ্যে ৫৮৫ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৫৪৪ জন Tirol রাজ্যে ৫১৪ জন,Kärnten রাজ্যে ২৮৫ জন, Salzburg রাজ্যে ২৪৫ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১০৬ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৭,১৬৯ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬০,৩৪,৩৩৫ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৭,৬ শতাংশ।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২,০৭,৩৩৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১২,৯২১ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ১০,৯৮,২৮৭ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯৬,১২৮ জন।এর মধ্যে আজ আইসিইউ বেডের রোগীর সংখ্যা ৬৭০ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩,১১৫ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

 14,800 total views,  1 views today