ওমিক্রোন নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রিয়ান সরকারের ট্রাস্ক ফোর্স গঠন

করোনার ওমিক্রোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় অস্ট্রিয়ান সরকার একটি নতুন “দেশব্যাপী কোভিড সংকট সমন্বয়” স্থাপন করছে,যা সংক্ষেপে GECKO
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে সরকার আসন্ন ওমিক্রোন ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা নিয়ে কোভিড সঙ্কট সমন্বয় কমিটি GECKO গঠন করেছে।অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল রুডলফ স্ট্রাইডিংগার এবং জনস্বাস্থ্যের মহাপরিচালক ক্যাথারিনা রিচকে এই কমিটির দ্বৈত প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারের (ÖVP) নেতৃত্বে আজ ভিয়েনায় সরকার এই কমিটি ও তার কার্যক্রম সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।ফেডারেল চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার (ÖVP) বলেন, এক অনাকাঙ্খিত সত্যের সাথে নতুন সংকট সমন্বয় প্রতিষ্ঠাকে ন্যায্যতা দিয়েছে যে “নতুন ওমিক্রোন ভেরিয়েন্টটি আমাদের ঘরের কোণার কাছাকাছি রয়েছে”। এটি এখন আর প্রশ্ন নয়, তবে নতুন রূপটি কবে অস্ট্রিয়াতেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে তাই আতঙ্কের বিষয়।তাই আমরা আমাদের দেশে ওমিক্রোনের সংক্রমণের বিস্তারের পূর্বেই আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই।তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই সমন্বয় কমিটি বা টাস্ক ফোর্স গঠন।
“ওমিক্রোনের ক্ষেত্রে আমাদের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসগুলি ভাল নয় – কাজেই আমাদের এটিকে সেভাবেই রাখতে হবে,” স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড.ভল্ফগাং মুকস্টাইন(Greens) নিশ্চিত করেছেন। “ভাইরাসটি আরও কপট হয়ে উঠছে, এর জন্য আমাদের নিজেদেরকে সজ্জিত করতে হবে।” স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভল্ফগ্যাং মুকস্টাইন আরও জানান, ওমিক্রোনের সংক্রমণের বিস্তার ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করবে সংকট ব্যবস্থাপনা কমিটি।তিনি বলেন,GECKO অবিলম্বে কাজ শুরু করবে এবং আগামী সপ্তাহে নতুন কমিটি প্রথম বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও ঘোষণা করেন, GECKO শুধুমাত্র একটি উপদেষ্টা সংস্থা হিসাবে সরকারের পাশে দাঁড়ানো ছাড়াও তাদের কাজের পরিধি আরও ব্যাপক আকারে বিস্তৃত করবে।যার মধ্যে রয়েছে টিকাদান,করোনার পরীক্ষা এবং নতুন কোভিড ওষুধের অর্ডার দেওয়া।নতুন কমিটি অস্ট্রিয়ার প্রতিটি রাজ্যে এবং জেলায় জেলায় তারা করোনার টিকাদান বৃদ্ধি ও করোনার পরীক্ষা তদারকি করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে নব গঠিত GECKO এর প্রধান অস্ট্রিয়ার জনস্বাস্থ্যের মহাপরিচালক ক্যাথারিনা রিচ বলেন, মহামারী ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত পুনর্গঠনের সাথে একজন কর্মী থেকে সেরা মনের জ্ঞানকে একত্রিত করবে এবং এই কমিটির লোকজন কোভিড পূর্বাভাস কনসোর্টিয়ামে থাকবে। GECKO-এর সাথে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং অপারেশনাল বাস্তবায়নের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় থাকবে। তিনি আরও বলেন,আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অস্ট্রিয়ায় করোনার ওমিক্রোনের বিস্তারের গতিবিধি ও বিস্তার হ্রাসে কাজ করবে।
নব গঠিত এই জাতীয় ওমিক্রোন সমন্বয় কমিটি GECKO দলের অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বিজ্ঞান, অপারেশনাল বাস্তবায়ন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্র থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে রেড ক্রস রেসকিউ কমান্ডার গেরি ফোটিক এবং সিমুলেশন গবেষক নিকোলাস পপার আরও অনেকেই। সামাজিক অংশীদার এবং সামাজিক বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিরাও এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
অস্ট্রিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্লাউডিয়া ট্যানার (ÖVP) সশস্ত্র বাহিনীকে “ভাইরাসের বিরুদ্ধে কৌশলগত অস্ত্র” হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং সেনাবাহিনীর পূর্ববর্তী সাফল্যের উপর জোর দিয়েছেন, উদাহরণস্বরূপ গণ পরীক্ষায়। স্ট্রাইডিংগার একজন সৈনিককে সঙ্কট ব্যবস্থাপনার কাজগুলো অর্পণ করার ন্যায়সঙ্গত করেছেন যেমন স্পষ্ট উদ্দেশ্য সাধনা এবং স্পষ্ট ভাষার ব্যবহার। একজন নেতৃত্বের ঐক্যের অর্থেও কাজ করে।
এদিকে অস্ট্রিয়ার প্রধান বিরোধীদল সোস্যালিস্ট পার্টির (SPÖ) চেয়ারপার্সন ডা.পামেলা রেন্ডি-ভাগনার বলেন, ২১ মাস পর চারটি লকডাউনের পর অবশেষে জাতীয় করোনা কমিটি গঠন করল সরকার।আমরা বিরোধীরা দীর্ঘ দিন যাবৎ সরকারকে করোনা কমিটি গঠনের দাবী করে আসছিলাম। বিরোধী নেত্রী পামেলা এপিএ কে বলেন, অবশেষে দেশে একটি কেন্দ্রীয় সংকট ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার প্রবর্তন হল “একটি সঠিক এবং দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষাকৃত পদক্ষেপ” যা তিনি মহামারীর শুরু থেকেই আহ্বান জানিয়ে আসছেন। “প্রশ্ন উঠছে কেন কেন্দ্রীভূত সংকট ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র ২১ মাস এবং চারটি লকডাউনের পরে আসল। তবে অন্তত, কখনও না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হলেও ভালো হয়েছে।”
অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংসদের বিরোধীদল অস্ট্রিয়ান ফ্রিডম পার্টির (FPÖ) সংসদের ক্লাবের ডেপুটি চেয়ারওম্যান ডাগমার বেলাকোভিচের আজ স্থানীয় একটি সম্প্রচার কেন্দ্রের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রাইখ এবং স্ট্রাইডিংগারের নিয়োগ সরকারের “অসহায়ত্ব” প্রকাশ পেয়েছে।”মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশেষজ্ঞদের কমিশন করার উপায় কিছু দেশে কাজ করেছে – তবে শুধুমাত্র যদি এটি প্রথম থেকেই হয়।”
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ২,১৬৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৪ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩৯১ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৪১৬ জন,Tirol রাজ্যে ৩৩৪ জন, OÖ রাজ্যে ৩১২ জন, Steiermark রাজ্যে ৩০৭ জন, Vorarlberg রাজ্যে ২২৯জন, Kärnten রাজ্যে ১১৩ জন, Burgenland রাজ্যে ৪৪ জন এবং Salzburg রাজ্যে ২১ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ১১,৬১৮ জন এবং এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬১,৯৯,২১৯ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৯,৪ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৪৭,৩৯৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৪৬২ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ১১,৮৬,৫৯৯ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৭,৩৩৮ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৪৯৬ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৮৬৩ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,806 total views, 1 views today