করোনা নিয়ে রাজনীতি করায় FPÖ প্রধানের তীব্র সমালোচনায় অস্ট্রিয়ার ফেডারেল রাস্ট্রপতি

অস্ট্রিয়ার একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে ফেডারেল রাস্ট্রপতি আলেকজান্ডার ফান ডার বেলেন অস্ট্রিয়ান ফ্রিডম পার্টির (FPÖ) প্রধান হার্বার্ট কিকলের করোনা নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার রাস্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ORF এর সংবাদ বিষয়ক বিভাগ Zeit im Bild (ZIB) জানিয়েছে, ২০১৭ সালে যখন FPÖ বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ÖVP এর সাথে কোয়ালিশন সরকারে ছিল তখন FPÖ প্রধান হার্বার্ট কিকল অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।তখন দেশবাসী দেখেছে তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন দেশের জন্য একটি “মহা বোঝা” ছিল।
রাস্ট্রপতি ফান ডার বেলেন FPÖ দলের প্রধান হারবার্ট কিকলের নীতির সমালোচনা করে বলেন, তার করোনা পলিসি বিপদজনক ও বিজ্ঞানের বিপরীত হওয়ায় কোন রাজনৈতিক দলই তার সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হয় নি।ফলে আমি বাধ্য হয়েই দেশের অত্যন্ত ক্রান্তিকালে করোনা পরিস্থিতির সার্বিক আলোচনা থেকে তাকে বাদ দেই।এখানে উল্লেখ্য যে, হারবার্ট কিকলের নেতৃত্বে অস্ট্রিয়ান ফ্রিডম পার্টি(FPÖ) অস্ট্রিয়ায় করোনার টিকা,লকডাউন ও বিভিন্ন বিধিনিষেধের বিরোধীতা করে আসছে।ফলে বর্তমান চলমান করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে করোনার প্রতিষেধক টিকা না নেয়ার কারনে মূলত FPÖ দলের নেতাকর্মীরাই বেশী আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে।
অস্ট্রিয়ার রাস্ট্রপতি আরও বলেন, বর্তমানে অস্ট্রিয়ান ফ্রিডম পার্টির প্রধান বলছে রাস্ট্রপতি আলেকজান্ডার ফান ডার বেলেন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আর গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ তারাই যে,ক্রমশ জন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে সেটা তারা বুঝতে পারছে না।
অস্ট্রিয়ার Tirol রাজ্যের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা Tiroler Tageszeitung জানিয়েছে অস্ট্রিয়ার ফেডারেল রাস্ট্রপতি আলেকজান্ডার ফান ডার বেলেন তাদের সাথে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে FPÖ দলের প্রধান হারবার্ট কিকলের বিরুদ্ধে সমাজকে উগ্রীকরণ সৃষ্টি, বাধ্যতামূলক টিকাকরণ এবং কুর্জের উত্থান ও পতনের পরিকল্পিত এবং বিতর্কিত আইনের বিষয়ে অভিযোগ করেন।তার ও তার দলের সম্পূর্ণ কর্মকাণ্ড এখন অস্ট্রিয়ার অখন্ডতা ও উন্নয়নের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থানে অবস্থান করছে।
রাস্ট্রপতি বিরোধী নেতা কিকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যখন নতুন ফেডারেল চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার(ÖVP) শপথ নিলেন, তখন আপনি সরকারকে বলেছিলেন যে করোনা সঙ্কটের বিষয়ে “জনসংখ্যার মধ্যে মিথ্যা প্রত্যাশা বাড়ানো” উচিত নয়। অর্থাৎ অতীতে সরকার কি সত্য বলার সাহস পায়নি?
আলেকজান্ডার ফান ডার বেলেন আরও বলেন, এই বছরের গ্রীষ্মে, মহামারীটির বিরুদ্ধে যে আশা এবং প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা খুবই দুর্দান্ত ছিল। আজ আমরা জানি যে,এই স্বাস্থ্য সংকটের সাথে আপনাকে প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস শিখতে হবে। এবং বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন তা আপনাকে মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন যে,গত দুই বছর যাবত রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হয়েছিল দেশে বাধ্যতামূলক টিকা দেওয়া হবে না।এখন বাধ্যতামূলক টিকা দেওয়ার নিয়ম এসেছে এবং একজন চরম অনুপাতের কথা বলে।টিকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনি কেমন অনুভব করেন? আপনি কি সমাজে অতিরিক্ত বিভাজনের ভয় পান? ফান ডার বেলেন আরও বলেন, মানুষের ভিন্ন মত থাকার মানে এই নয় যে আমাদের বিভাজনের কথা বলা উচিত।
আমি স্বাস্থ্য সংকট, চাকরি বা আমার নিজের কোম্পানির জন্য ভয়, স্কুলে নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির মিশ্রণকে চিনতে পারি। তাই, সব মিলিয়ে, সব খুব বৈধ উদ্বেগ।আমার ইতিমধ্যেই আশা আছে যে আমরা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব এবং আমরা নতুন অর্থনৈতিক মন্দা অনুভব করব না। আমাদের আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়, তবে যা প্রয়োজন তা করা উচিত।
বাধ্যতামূলক টিকাদানের ব্যাপারে ফান ডার বেলেন বলেন, আইনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আমি অনুমান করি যে সমস্ত দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ, যাদের এই বিষয়ে কিছু বলার আছে, তারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হবেন। এমন অভিজ্ঞতামূলক গবেষণা রয়েছে তাদের কাজের অনুসারে আমরা আশা করতে পারি যে এই আইন দ্বারা অনেক লোককে টিকা দেওয়া হবে। বিশেষ করে টিকা নিয়ে সংশয়বাদীদের সাথে, এটি মুখ না হারিয়ে টিকাদানে যেতে সক্ষম হওয়ার বিষয়ে হতে পারে। যাইহোক, আমি তিনবার টিকা দিয়েছি – কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে ২,২৪২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭ জন।রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৪১০ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৪১১ জন, NÖ রাজ্যে ৩৯১ জন, Tirol রাজ্যে ৩২২ জন, Steiermark রাজ্যে ২৩৬ জন, Kärnten রাজ্যে ১৭৭ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১৪৫ জন, Salzburg রাজ্যে ১০৪ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৪৬ জন নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৮,৬৪৫ ডোজ এবং এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬২,১২,৪৭৬ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৯,৬ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৪৯,৬৪১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৪৭৯ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৪,৬৩২ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৪৭৯ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৭৭৩ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,787 total views, 1 views today