অস্ট্রিয়া সহ ইইউতে গত তিন মাসে ২,৭০০ জন বাংলাদেশীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে দুই হাজার সাতশ জন বাংলাদেশি প্রবেশ করেছেন৷
ইউরোপ ডেস্ক থেকে কবির আহমেদঃ ইউরোপের ইমিগ্রেশন ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টাল ইনফোমাইগ্রেন্টস জানান, বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী গত সেপ্টম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইইউতে আশ্রয় আবেদন করেছেন৷ যাদের মধ্যে শীর্ষে আছে আফগান নাগরিকরা।সর্বমোট ৬০,৮১০ জন আশ্রয়প্রার্থী এই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন করেছে৷ যাদের মধ্যে প্রায় ২,৭০০ জন বাংলাদেশি নাগরিক।যার মধ্যে অস্ট্রিয়াতেও রয়েছে কয়েক ডজন বাংলাদেশী।
ইনফোমাইগ্রেন্টস আরও জানান, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে বৈশ্বিক মহামারী করোনা শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা প্রাক কোভিড সময়কালের স্তরে পৌঁছাল। আশ্রয়পার্থীর তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করেছে দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান। তাছাড়াও এই তালিকায় আরও আছে সিরিয়া, ইরাক, পাকিস্তান এবং তুরস্ক।
এই পরিসংখ্যানটি উঠে এসেছে ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত সর্বশেষ মাসিক রিপোর্টে। প্রথম আশ্রয় আবেদনের এই সংখ্যাটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৫৮% বেশি। এমনকি এটি মহামারীর আগের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান পরিষেবা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো আবেদন করা ৫৪,৫০০ জন আশ্রয়প্রার্থীকে নথিবদ্ধ করেছিল।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিভিন্ন দেশের সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ি থাকায় আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা অভূতপূর্বভাবে হ্রাস পেয়েছিল। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুসারে, পুরো ২০২০ সাল জুড়ে সমস্ত ইইউ সদস্য রাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা চাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৪,৭১,২৭০ হাজার। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩২.৬ শতাংশ কম৷ সর্বশেষ ২০১৩ সালে ইইউতে এত কম সংখ্যক আশ্রয়পার্থী নথিভুক্ত হয়েছিল।

বর্তমান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তান। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পরিসংখ্যানে সর্বোচ্চ আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী দেশ আফগানিস্তান। সেপ্টেম্বর মাসে, সর্বমোট ১৩,৮০০টি প্রথম আশ্রয় আবেদন দায়ের করে আফগানরা। এটি নিবন্ধিত প্রথম আশ্রয়ের আবেদনের প্রায় এক চতুর্থাংশ, আগস্ট মাসের তুলনায় সংখ্যাটি ৬৩ শতাংশ বেড়েছে।
অপরদিকে ৮৭০০ জন নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় এবং তৃতীয়তে আছে যথাক্রমে সিরীয়া এবং ইরাকিরা। ইইউর দেশগুলোতে ২,৭০০ জন প্রথম আবেদন করা আশ্রয়প্রার্থী নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে চতুর্থ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ২,৫০০ আবেদনকারী নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে তুরস্ক এবং পাকিস্তান আছে ষষ্ট অবস্থানে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে আশ্রয় আবেদনকারীর সংখ্যা বিবচেনায় প্রথম দেশ হল জার্মানি যেখানে ১৩,৮০০ টি আবেদন জমা পড়েছে (২৩%)। ১২৮০০ আবেদনকারী এসেছে ফ্রান্সে (২১%)। ইতালি এবং স্পেনে যথাক্রমে ১০ শতাংশ করে আবেদন নথিভুক্ত করে থাকে। আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য করা প্রথম আবেদনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইইউ’র এই চার সদস্য রাষ্ট্রে নিবন্ধন করা হয়েছে।
সুরক্ষার আবেদন করেছে ২,৮০০ জন অভিভাবকহীন নাবালক, ইউরোস্ট্যাট জনায়, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসে ২,৮০০ জন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে। মনে রাখতে হবে, এই সংখ্যাটি জানুয়ারি ২০২১ থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। ইইউ দেশ সমূহের মধ্যে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসে অপ্রাপ্ত বয়স্করা সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছে।
প্রথম আবেদনের বাইরে, সেপ্টেম্বর মাসে ইইউতে ৮,৬০০টি দ্বিতীয় আশ্রয়ের আবেদন হয়েছে। আগস্ট মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দ্বিতীয় আবেদনের হার বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ, কিন্তু জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমেছে৷
২০২১ সালের শুরু থেকে প্রথমবারের মতো, ইউরোস্ট্যাট প্রথম আবেদন, দ্বিতীয় আবেদন এবং নাবালকদের জন্য আলাদা আলাদা পরিসংখ্যান প্রকাশ করা শুরু করেছে। যার ফলশ্রুতিতে, এসব তথ্যের বিবর্তন, পর্যবেক্ষণ এবং সার্বিক বিশ্লেষন আসতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ২,০৮৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন।রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮৪ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৩৩৫ জন, OÖ রাজ্যে ২৭৯ জন,Tirol রাজ্যে ২৪৪ জন, Steiermark রাজ্যে ২২০ জন, Salzburg রাজ্যে ১৩৯ জন, Kärnten রাজ্যে ১২৯ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১১৫ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৪০ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৯০ জন। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬২,৭৭,৬০৮ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০,৩ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৬২,৮৩৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৬২৬ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছে মোট ১২,১৮,৬০৫ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩০,৬০৫ জন।এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৩৯০ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,২২৩ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,809 total views, 1 views today