ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক অনলাইন জুম ভার্চুয়াল সিরাত মাহফিল অনুষ্ঠিত

গতকাল সন্ধ্যার এই জুম ভার্চুয়াল সিরাত মাহফিলের প্রধান বক্তা ছিলেন যুক্তরাজ্য থেকে সমসাময়িক সময়ের প্রখ্যাত সিরাত আলোচক,যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার অধ্যাপক মফিজুর রহমান

 কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কালচারাল এন্ড সোস্যাল ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক অনলাইন ভার্চুয়াল সিরাত মাহফিল অর্থাৎ নবী ও রাসূল মোহাম্মদ সাঃ জীবনী নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বের দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনটির সভাপতি অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির সন্মানিত ইমাম মাওলানা আবদুস সাত্তার।আর সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির সন্মানিত ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন মাসুম।আর প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য থেকে প্রখ্যাত সিরাত আলোচক, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার অধ্যাপক মফিজুর রহমান।

গতকালের এই সিরাত মাহফিলের অনুষ্ঠানটি অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির সকল পেজ থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে লাইভ প্রচারিত হয়েছে।ফলে অস্ট্রিয়া, যুক্তরাজ্য,ইতালি,অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের আরও একাধিক দেশের কয়েক শতাধিক প্রবাসীরা এই সিরাত মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।

প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী এই সিরাত মাহফিলের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির সন্মানিত ইমাম মাওলানা সায়েদুর রহমান আজহারী।এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকেও অংশগ্রহণ করেন অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটির সাবেক ইমাম মাওলানা আবদুল কাউয়ুম।

সভাপতি হিসাবে উদ্বোধনী ভাষণে অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ কালচারাল এন্ড সোস্যাল ফোরামের প্রধান মাওলানা আবদুস সাত্তার বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার জন্য কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর আজ আমরা অনলাইন জুম ভার্চুয়ালে এই সিরাত মাহফিলের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারায় সর্ব প্রথম মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আরও বলেন,দুনিয়ার সবচেয়ে আদর্শ মানুষ আল্লাহর মনোনীত বান্দা ও রাসূল মোহাম্মদ সা: এর জীবনী অনুকরণ ও অনুশীলনের মাধ্যমেই আমরা আমাদের প্রার্থিব ও পরলৌকিক জীবনে সফলতা লাভ করতে পারি।

তিনি আরও বলেন,রাসূল সা: এর জীবনী আলোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা ছাড়া আমাদের মুক্তির আর কোন বিকল্প পথ নাই।সিরাত মাহফিলের প্রধান বক্তা হিসাবে যুক্তরাজ্য (ইউকে) থেকে অধ্যাপক মফিজুর রহমান তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন নবী ও রাসূল মোহাম্মদ সাঃ এর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই বিশ্ব মানবতার জন্য একটি উত্তম আদর্শ হিসাবে স্বীকৃত। এই প্রসঙ্গে তিনি পবিত্র কোরআনের ৩৩ নাম্বার সূরা আল আহযাবের ২১ নাম্বার আয়াতের কথা উল্লেখ করেন।এখানে আল্লাহ অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর (সা:) এর জীবনীর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।”

অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, দুনিয়ার মানুষের মধ্য একমাত্র নবী ও রাসূল মোহাম্মদ সাঃ ব্যতীত আর কোন নবী,রাসূল বা অন্য কোন মানুষের জীবনীকে এতো বৃহত পরিসরে আদর্শ হিসাবে মানা হয় না।পূর্বের নবী ও রাসূলগণ এসেছিলেন নির্দিষ্ট গোত্র, এলাকা বা দেশের জন্য কিন্ত রাসূল মোহাম্মদ সাঃ এসেছেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য বিশ্বনবী হিসাবে।তাই রাসূল মোহাম্মদ সাঃ এর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

আদর্শ জীবনকে অনুসরণ করা কেন প্রয়োজন, সে প্রসঙ্গে অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে প্রেরণ করে মানুষদের আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মকানুন মেনে চলার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। সে সমস্ত নবী ও রাসূলগণ তাদের জন্য আদর্শ ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ প্রতি মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর হেদায়েত ও রহমতের মুখাপেক্ষী। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, যেমন ধরুন আল্লাহ মরুভূমির উঠ,ছাগল ইত্যাদি মুমিন মুসলমানদের জবাই করে খেতে বলেছেন কিন্ত কুকুর বা শুকুরের মাংস খেতে বারণ করেছেন। কেন বারণ করেছেন এর উত্তর দুনিয়ার কোন মানুষের জানা নাই। অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টিকর্তার হুকুম অবশ্যই মানতে হবে। ফলে আমাদের জীবনের চলার পথে আল্লাহ আমাদের কি করতে বলেছেন,কি খেতে বলেছেন এবং কি খেতে বারণ করেছেন এবং কি করতে নিষেধ করেছেন,সেটা জানা বা মেনে চলার নামই হেদায়েত।

অধ্যাপক মফিজুর রহমান তার বক্তব্যের শেষের দিকে বলেন, একজন মানুষ কিভাবে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একজন আদর্শ হতে পারে,ব্যাপারটি সত্যিই বিস্ময়কর! রাসূল মোহাম্মদ সাঃ এর হাজার হাজার বছর পূর্ব থেকেই মহান আল্লাহতায়ালা শেষ নবী মোহাম্মদ সাঃ এর আগমনের বার্তা দিয়ে রেখেছেন।মহানবী মোহাম্মদ সাঃ যখন প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে আরব দেশে এসেছিলেন,সে সময়ের আরবরা ছিল দুনিয়ার মানুষের মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ মানুষ। তারা জেনা,ব্যভিচার,খুন-খারাপী এবং নিজের জীবন্ত মেয়েকে মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করতো। সেই জাতির মধ্য থেকেই সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তম চরিত্র দিয়ে আল্লাহ নবী মোহাম্মদ সাঃ কে প্রেরণ করেন। নবী মোহাম্মদ সাঃ সেই ভয়ঙ্কর যুগেই আরবে ৪০ বছর পর্যন্ত একজন সত্যবাদী হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।পরবর্তীতে তার এই উত্তম চরিত্রের সংস্পর্শে এসে মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ চরিত্রের মানুষ গুলি একে একে সত্যিকারের মানুষে পরিবর্তিত হয়ে গেল।তাইতো আল্লাহ সকল মানুষকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে, তোমাদের জন্য তোমাদের রাসূলের জীবনীতে উত্তম চরিত্রের নমুনা রয়েছে।

 14,633 total views,  1 views today