অস্ট্রিয়ায় ওমিক্রোনের বিস্তাররোধে হাতে থাকা সময়কে কাজে লাগাতে হবে-টাস্ক ফোর্সের প্রধান

অস্ট্রিয়ার নবগঠিত করোনার টাস্ক ফোর্স প্রধান ও জনস্বাস্থ্যের মহাপরিচালক ক্যাথেরিনা রাইখ বলেছেন, “আমাদের হাতে থাকা সময়কে কাজে লাগাতে হবে এবং এখন করোনার ব্যবস্থাগুলি যথাযথভাবে মানতে হবে”

 কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ নতুন বছরের প্রাক্কালে অস্ট্রিয়ার নবগঠিত “জাতীয় কোভিড ক্রাইসিস কোঅর্ডিনেশন”(GECKO) বা “করোনার টাস্ক ফোর্স”এর সদস্যরা ।

আজ বুধবার রাজধানী ভিয়েনায় বৈঠক করেছেন।এই টাস্ক ফোর্সের আরেকজন যৌথ প্রধান হচ্ছেন অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রুডলফ স্ট্রাইডিংগার। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল নরবার্ট গেহার্ট তার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছেন। তাছাড়াও এই টাস্ক ফোর্সে আছেন বিশেষজ্ঞ দল,সামাজিক অংশীদার সহ বিভিন্ন বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিগণ।

আজকের বৈঠকে তারা অস্ট্রিয়াতে করোনভাইরাসের ওমিক্রোন রূপের বর্তমান সংক্রমণের বিস্তার বৃদ্ধির পরিধির বিষয় নিয়ে ও করণীয় ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন।টাস্ক ফোর্সের সংক্রমণ রোগ ও পরিসংখ্যান বিশেষজ্ঞরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশে ওমিক্রোনের সংক্রমণের বিস্তার আরও দ্রুত গতিতে বৃদ্ধির সতর্কতা দিয়েছেন।

বৈঠকের পর নতুন টাস্ক ফোর্সের দুই প্রধানের এক যৌথ সম্মেলনে ক্যাথেরিনা রাইখ বলেন,ওমিক্রোনের জন্য দেশে জানুয়ারিতে একটি নতুন লকডাউন প্রতিরোধ করার জন্য,আমাদের নববর্ষের প্রাক্কালে বড় উদযাপন এড়ানো উচিত। তিনি আরও বলেন, “নববর্ষের প্রাক্কালে খুব সম্ভবত শুধুমাত্র বছরের পালা নয়,করোনার নতুন সংক্রমণের বক্ররেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও আমরা অবস্থান করছি ।আমাদের সতর্ক হওয়ার জন্য এখনও হাতে সময় আছে, তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত করোনার বিধিনিষেধগুলি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

অস্ট্রিয়ার নব গঠিত করোনার টাস্ক ফোর্সের আরেকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নরবার্ট গেহার্ট বলেন,আসন্ন নববর্ষ উদযাপনে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ইতিমধ্যেই বৃহত পরিসরের গতানুগতিক উৎসব উদযাপন বাতিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে স্বল্প পরিসরে নববর্ষ উদযাপন করা যেতে পারে। বর্তমানে আমরা কেবলমাত্র ওমিক্রোনকে জানছি, তবে আমরা ইতিমধ্যে জানি যে আমাদের বিপদগুলিও দুর্দান্ত।  এটা স্পষ্ট যে আমাদের মহামারীর একটি নতুন গতিশীলতার সাথে গণনা করতে হবে।  অত্যন্ত দ্রুত উন্নয়ন প্রত্যাশিত।

সংবাদ সম্মেলনে টাস্ক ফোর্সের সদস্য অস্ট্রিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা.থমাস সেকেরেস বলেন, এখন রাত ১০ টার পর দেশব্যাপী প্রস্তান নিষেধাজ্ঞা বা কারফিউয়ের ফলে নববর্ষের প্রথম দিকেই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনের সংক্রমণের বিস্তার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন,“এটি স্পষ্ট করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত যে বছরের এই মোড়কে বড় আকারের উদযাপন বিপজ্জনক এবং সংক্রমণের হারের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ওমিক্রোন তরঙ্গ আসবে, তবে এটি কত দ্রুত এবং কত বড় হয় তা আমাদের সবার উপর নির্ভর করছে।আমরা যদি এখনই সতর্ক থাকি, তাহলে একসাথে আমরা আরেকটি লকডাউনের ঝুঁকি কমাতে পারি।”

GECKO অর্থাৎ অস্ট্রিয়ান করোনার টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ভিয়েনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর বা প্রধান অধ্যাপক মার্কাস মুলার বলেন, বর্তমান করোনার বিধিনিষেধ যথাযথভাবে পালন করা হলে আমাদের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (I.C.U) লোডকে আরও কমাতে সাহায্য করবে। যাদের করোনার প্রতিষেধক টিকার তৃতীয় ডোজ নেয়ার সময় হয়েছে, তিনি তাদের দ্রুত বুস্টার ডোজ গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন।আর ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও করোনার পঞ্চম প্রাদুর্ভাবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনের জন্য সকলে সতর্কতার সাথে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন।

আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩,২৫১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭ জন।আশঙ্কা করা হচ্ছে অস্ট্রিয়ায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনের জন্য এখন থেকে আগামী কয়েক সপ্তাহে করোনার সংক্রমণের বিস্তারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।

আজ রাজধানী ভিয়েনায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৯১২ জন।

অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৫৬৪ জন, Tirol রাজ্যে ৪৮১ জন, OÖ রাজ্যে ৪০৩ জন, Steiermark রাজ্যে ৩৫১ জন, Salzburg রাজ্যে ২০৫ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১৩২ জন, Kärnten রাজ্যে ১১০ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৯৩ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৫,৫২৩ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬৩,০৪,৩৫৪ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০,৬ শতাংশ।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৭১,৭৭০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৬৮৯ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ১২,২৯,৪৪৭ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৮,৬৩৪ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৩৫৩ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,১৪৭ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

 

 14,715 total views,  1 views today