শক্তি ও সাহস অক্ষুন্ন রেখে নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান অষ্ট্রিয়ান রাষ্ট্রপতির

১ জানুয়ারি নববর্ষ উপলক্ষ্যে এক টেলিভিশন ভাষণে অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ফান ডার বেলেন বলেন,নতুন বছরে নতুন উদ্যমে শক্তি ও সাহস অক্ষুন্ন রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে

 কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ শুভ নববর্ষ ! আজ ২০২২ সালের প্রথম দিন ১ জানুয়ারী। অস্ট্রিয়ান রাস্ট্রপতি আলেকজান্ডার ফান ডার বেলেন নতুন বছরের প্রথম দিনের সন্ধ্যায় দেশবাসীকে নববর্ষের এক ভাষণে বলেন আমাদের “হৃদয় হারাতে হবে না”। এই বছর আবার করোনা মহামারী এবং সমাজের জন্য এর পরিণতি নিয়ে আবর্তিত হয়েছে তবে আমাদের সাহস হারালে চলবে না।

রাস্ট্রপতি তার ভাষণে আরও বলেন,দেশে জরুরী অবস্থা যত দীর্ঘস্থায়ী হয়,”আমাদের সম্প্রদায়ে আরও লক্ষণীয় ফাটল স্পষ্ট হয়ে ওঠে  দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।অধৈর্যতা, সংশয়, সমালোচনা, ক্ষোভ এবং হতাশার পরে ছিল “রাগ, ক্রোধ, ভয়; কণ্ঠস্বর যা সবকিছু ভাল জানে, সন্দেহের কণ্ঠস্বর, কণ্ঠস্বর যা ষড়যন্ত্রের কথা বলে, অস্থিরতার কথা বলে, কিন্তু প্রকৃত হতাশাও,” বলেছেন ফেডারেল প্রেসিডেন্ট।”আজ এই কণ্ঠস্বরগুলি মাঝে মাঝে এত জোরে হয় যে আপনি আর নিজের কথা বুঝতে পারবেন না। অন্যের কথা ছেড়ে দিন”। রাস্ট্রপতি এখনও যারা করোনার বিধিনিষেধ ও টিকাদানের বিরোধীদিতা করছেন তাদের লক্ষ্য করে উপরোক্ত দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রাস্ট্রপতি আরও বলেন, আমাদের মাঝে বৈশ্বিক মহামারী করোনার শেষ এখনও দেখা যাচ্ছে না।করোনা ভাইরাসের নতুন রূপান্তর ওমিক্রোনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফান ডার বেলেন ব্যাখ্যা করে আরও বলেন, করোনার সমাপ্তি দূরের ব্যাপার।সত্যি বলতে কি, কেউ জানে না পরের দিন এবং সপ্তাহগুলিতে আমাদের জন্য কি নিয়ে আসছে।তবে আমাদের উদাসীন হলে চলবে না।আমাদের আশা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।বৈশ্বিক মহামারীর বিরুদ্ধে রাগলে চলবে না।

রাস্ট্রপতি অতীতের মতই আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফাটল ধরতে দেয়া যাবে না।দেশের একজন আদর্শ নাগরিক হিসাবে আমাদের কর্তব্য সরকারের নানান দিক নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা।রাস্ট্রপতি অস্ট্রিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের “নতুন সময়ে সাহসী” লাইনটি স্মরণ করে বলেন – “এই সেই দিনগুলি যখন আমরা আমাদের জাতীয় সঙ্গীতকে জীবন দিয়ে পূরণ করি”, ফেডারেল রাষ্ট্রপতি তা আশা করেন।

 তিনি আরও বলেন, “আমাদের কিছুতেই উদাসীন হওয়া উচিত নয়”।”আমাদের নিজেদেরকে হতাশা ও ক্রোধের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেওয়া উচিত নয়।আমাদের কোনো কিছুর প্রতিই উদাসীন হওয়া উচিত নয়”।অস্ট্রিয়া সহ সমগ্র ইউরোপে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রোনের সংক্রমণের বিস্তার লাভের ফলে আমাদের এখন আবার একজন থেকে আরেকজনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, টিকা নেওয়া এবং আপনার হাত ধোয়া ছাড়াও একে অপরের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  “আমি মনে করি এখন অন্যরা যারা আপনার সাথে একমত নয় তাদের ছোট করা একটি ভুল হবে,” রাস্ট্রপতি সতর্ক করে দিয়েছিলেন।  সবাই চাপের মধ্যে আছে, কিন্তু একজনকে এখনও অন্যের ভালোতে বিশ্বাস করতে হবে।  একজনকে স্বাস্থ্য খাতে কর্মীদের উত্সর্গ থেকে একটি উদাহরণ নেওয়া উচিত, “যারা দীর্ঘ, দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সীমাতে এবং তাদের সেবার উপরে ছিল এবং এখন অন্যদের জন্য সেখানে থাকার জন্য আক্রমণ করা হচ্ছে”।

ফেডারেল রাষ্ট্রপতি বিশ্বাস করেন যে, এটি সর্বদা একে অপরের সাথে একমত হওয়ার প্রশ্ন নয়, তবে এটি করার জন্য প্রতিটি সুযোগ ব্যবহার করা উচিত।  এক পর্যায়ে আপনি মহামারীর সময় ফিরে তাকাবেন এবং বলবেন: “এটা ভাল যে আমরা আবার আমাদের শিথিলতা খুঁজে পেয়েছি। এবং কখনও আমাদের সাহস এবং আমাদের আত্মবিশ্বাস হারাইনি। এটা ভাল যে আমরা এখনও একে অপরের চোখের দিকে তাকাতে পারি, “ফান ডার বেলেন বলেছেন।  “আমি আপনাকে এবং আমাদের সকলকে ২০২২ সালের একটি দুর্দান্ত বছর কামনা করি,সবকিছু সত্ত্বেও”। 

এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩,৬০৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন।রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,১৪০ জন।

অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ ৫১০ জন, Salzburg রাজ্যে ৪৮৬ জন, OÖ রাজ্যে ৪০৯ জন,Tirol রাজ্যে ৪০২ জন, Steiermark রাজ্যে ৩১৯ জন, Kärnten রাজ্যে ১৬৪ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১১৬ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৬২ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬৩৯ ডোজ এবং আজ অস্ট্রিয়ার করোনার প্রতিষেধক টিকার তৃতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৫,০০২ জন। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৬৩,২৫,৩৭৭ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০,৮ শতাংশ।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২,৭৮,৬১৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৭৪৯ জন।করোনার থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ১২,৩৭,০৬১ জন।বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩১,৪১৭ জন।এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৩২২ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,০০৪ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

 14,720 total views,  1 views today