করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে সংক্রমিত হওয়ার কতদিন পর উপসর্গ দেখা দেয়

 কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ দক্ষিণ আফ্রিকায় গত নভেম্বর মাসে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রোন নিয়ে বিশ্বব্যাপী সতর্কতা অবস্থা চলছে। বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে করোনার আফ্রিকান এই  ভ্যারিয়েন্টটি। ইউরোপের মধ্যে বৃটেন, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে এটি চরম আকার ধারন করেছে।

অস্ট্রিয়াতে এটি এই সপ্তাহ থেকে তার সংক্রমণের ছোবল প্রসারিত করা শুরু করেছে। বুধবার মধ্য ইউরোপের এই ছোট ও সুশৃন্খল দেশটিতে একদিনেই প্রায় দশ হাজার মানুষ সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে।অস্ট্রিয়ার সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা দিয়েছেন যে, কোন পদক্ষেপ না নিলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।তারা আরও সতর্ক করেছেন যে, ওমিক্রোনের আক্রমণ বা এর উপসর্গ হালকা বলে অবহেলা করা উচিত না।যে কোন মুহূর্তে ওমিক্রোনও অগ্নিমূর্তি ধারন করতে পারে।

বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে ওমিক্রন। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে।

যদিও ওমিক্রনকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ‍তুলনায় বেশি শক্তিশালী মনে করা হচ্ছে না, কিন্তু এটি ডেল্টার চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়ানোয় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ সৃষ্টির আশঙ্কা নিয়ে বাংলাদেশেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে ভ্যারিয়েন্টটি।

বাংলাদেশের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমিক্রোন সংক্রমণ সম্পর্কিত শারীরিক জটিলতা এবং এটির বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ করোনার এই স্ট্রেইনটি নতুন এবং এটি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।এ পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বোত্তম সম্ভাব্য সমাধান হলো, করোনার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে যথাযথ টিকা গ্রহণ করা।

করোনাভাইরাসের মূল ধরন কিংবা নতুন যতগুলো ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ এখন পর্যন্ত দেখা গেছে- সবগুলোর ক্ষেত্রেই ব্যক্তিভেদে কম-বেশি একই রকমের উপসর্গ দেখা দেয়।ওমিক্রোনের প্রাথমিক কিছু উপসর্গ হলো- হালকা জ্বর, ক্লান্তি, চুলকানি ও শরীর ব্যথা।তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হলে যেমন গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি চলে যায়, ওমিক্রোন সংক্রমণে তেমনটা দেখা যায়নি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

ওমিক্রোন  সংক্রমণ পরবর্তী শারীরিক অবস্থা কতটা জটিল হতে পারে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অস্ট্রিয়াতে প্রচুর মানুষ সংক্রমিত হলেও প্রায় সকলেই বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গতকাল বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তার দেশে দৈনিক সংক্রমণ এক লাখ হলেও কোন কঠোর বিধিনিষেধ ছাড়াই ওমিক্রোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পার হতে পারবেন বলে আসা করছেন।তবে যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশের গবেষকরা এখনও করোনার নতুন এই স্ট্রেইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার করার চেষ্টা করছেন, যা মাত্র দেড় মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত হয়েছিল।

বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওমিক্রোন বা করোনার অন্য যেকোনো ভ্যারিয়েন্ট, শরীরে প্রবেশের সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো শুরু হয়। সর্বোচ্চ ১৪ দিন পার করেও উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। তবে সবক্ষেত্রে উপসর্গ প্রকাশ পাবে এমন নয়।কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক রোগীই উপসর্গহীন থাকতে পারেন।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় শতকরা ৪০ শতাংশ রোগী উপসর্গ বিহীন।শুধুমাত্র নিয়ম মাফিক চেক আপে তারা আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছেন।

করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির উপসর্গগুলো দেখা দেওয়ার প্রায় ২ দিন আগে থেকে এবং উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার ১০ দিন পর পর্যন্ত অন্যদের সংক্রামিত করতে পারে। এমনকি ওমিক্রোনের ক্ষেত্রেও, সংক্রমণের ৩-১৪ দিনের মধ্যে যেকোনো সময় উপসর্গগুলো দেখা যেতে পারে।বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করা এবং নিজেকে আইসোলেশনে রাখা উচিত।

 14,609 total views,  1 views today