ভিয়েনায় পুলিশের বাধায় হাজার হাজার মানুষের করোনা বিরোধী বিক্ষোভ লন্ডভন্ড

অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টির(FPÖ) সমর্থনে করোনার বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও বাধ্যতামূলক টিকাদানের বিরোধীদের বিক্ষোভে ভিয়েনা পুলিশের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ ফেডারেল রাজধানী ভিয়েনায় আজ শনিবার দুপুরের পর করোনার বিভিন্ন বিধিনিষেধ এবং টিকাদানের বিরোধীরা পুনরায় আবার রাস্তায় নেমেছিল। তাদের সাথে আরও অন্যান্য সমমনা করোনার বাধ্যতামূলক টিকাদান কর্মসূচির বিরোধী নতুন দল MFG এর সদস্যরাও। তারা শনিবার বিকেলে শহরের প্রাণকেন্দ্রের অন্যতম প্রধান সড়ক রিং রোড জুড়ে একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছিল।
তবে ভিয়েনা পুলিশ প্রশাসনের প্রায় ১,০০০ হাজার পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক তৎপরতায় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে তর্ক-বিতর্কে এবং হালকা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
শনিবার দুপুর পর থেকে রাস্ট্রপতি ভবন “হোফবুর্গের” নিকট হেল্ডেনপ্লাটজে এবং মারিয়া-থেরেসিয়েন- প্ল্যাটজে সবচেয়ে বড় দুইটি করোনার বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও টিকাদানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল অসংখ্য অস্ট্রিয়ার জাতীয় পতাকা সহ বিভিন্ন অ্যান্টি-করোনা এবং অ্যান্টি-ট্যাকসিনেশন স্লোগান সহ হরেক রকমের ব্যানার এবং ফেস্টুন ।
সরকারের FFP2 মাস্ক পড়ার ঘোষণা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারী এবারও মাস্কের প্রয়োজনীয়তা মেনে চলেনি। এমনকি বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগে, সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিতে সমালোচনা ছিল যে সমাবেশে যাওয়ার পথে গণপরিবহনেও তাদের মধ্যে অসংখ্য বিক্ষোভকারীদের মুখে মাস্ক ছিল না।
অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা Kronen Zeitung জানিয়েছে, শনিবার রাজধানী ভিয়েনায় দুপুর ২টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের অন্যতম প্রধান রিং রোড হয়ে হেল্ডেনপ্লাটজের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তবে পুলিশ গোয়েথে স্মৃতিস্তম্ভের কাছে তাদের গতিরোধ করেন।পুলিশ জানায়, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন আতশবাজি নিক্ষেপ ছাড়াও অগ্নি প্রজ্জলন করেন।বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন রকমের এই রকম কর্মকাণ্ডে সম্পূর্ণ এলাকা অনেকটাই রণক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ তাদের আতষবাজি ও অগ্নি প্রজ্জলনে বাধা দিতে গেলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ হয়। এই সময়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ আধিকারিকদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপের খবর পাওয়া গেছে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে পিপার স্প্রেও নিক্ষেপ করে।ফলে পুলিশ এখানে কয়েকজন বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে।পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে মৃদু লাঠি চার্জ ও টিয়ার গ্যাস ও জলকামানেরও ব্যবহার করেন।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৭,৪০৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪ জন।রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,৯৬০ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ১,০৯২ জন, Tirol রাজ্যে ১,০৪৩ জন, OÖ রাজ্যে ৯৮১ জন, Salzburg রাজ্যে ৮৮৭ জন, Steiermark রাজ্যে ৬০৯ জন, Kärnten রাজ্যে ৪০২ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৩২৭ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১০৪ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৫,৫৯৬ ডোজ এবং এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৬৩,১৩,০৫৭ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০,৭ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩,২৯,১৩০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৮৪৪ জন।করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ১২,৫৩,০৭৫ জন।বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৬২,২১১ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২৭১ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯২০ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,596 total views, 1 views today