কাল থেকে অস্ট্রিয়ায় খুচরা দোকানপাট ও শপিংমলে কঠোরভাবে ২-জি নিয়ম নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

করোনার বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে ৩০,০০০ হাজার পুলিশ সদস্যকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে
কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন আজ স্বরাষ্ট্রমণ্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার (ÖVP) আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে অস্ট্রিয়ায় কঠোরভাবে করোনার নতুন বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রণের হুঁশিয়ারি দেন।এই সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রিয়ার জাতীয় জন নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল ফ্রাঞ্জ রুফ এবং ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর ম্যানুয়েল শেরসার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরহার্ড কার্নার তার বক্তব্যের শুরুতেই অত্যন্ত কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে অস্ট্রিয়ার পুলিশ প্রশাসন।
আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সমগ্র অস্ট্রিয়ায় ৩০,০০০ হাজার পুলিশ সদস্য রাস্তায় ও খুচরা দোকানপাটে লোকজনদের FFP2 মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব ২ মিটার নিয়ন্ত্রণ করবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, অস্ট্রিয়ায় করোনার ওমিক্রোন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের বৃদ্ধির ফলে সরকার বাহিরে খোলা জায়গাতেও যেখানে একজন থেকে আরেকজনের দুই মিটার দূরত্ব মেনে রেখে চলা সম্ভব না, সেখানে সকলের জন্য FFP2 মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করেছে।অর্থাৎ মূলত এখন থেকে ঘর হতে বের হলেই FFP2 মাস্ক পড়তে হবে।পূর্বে বলবৎ থাকা আইন যেমন গণপরিবহনে ও সুপারমার্কেটে FFP2 মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক অব্যাহত থাকবে।
একটি সূত্র জানিয়েছে পুলিশ মূলত নিয়ন্ত্রণ করবে বিভিন্ন শপিংমল সহ খুচরা দোকানপাটে ও রাস্তাঘাটে।যেমন পথচারী পারাপার বা বিভিন্ন দোকানপাটের সামনে লাইনে দুই মিটারের দূরত্ব এবং FFP2 মাস্ক।পুলিশ যেহেতু ইউনিফর্ম ছাড়াও সাদা পোশাকে থাকবে তাই ঘর থেকে বের হলেই FFP2 মাস্ক পড়ে নেয়া ভালো বলে অনেকেই মতামত দিয়েছেন।জরিমানা কমপক্ষে €৯০ ইউরো থেকে শুরু করে €৩,৬০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।
অস্ট্রিয়ান ট্রেড ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেনার ট্রেফেলিক এপিএকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন খুচরা দোকানপাট ও শপিংমলে কঠোরভাবে FFP2 মাস্ক ও দুই মিটারের সামাজিক দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করা হবে।তিনি সকলকে যথাযথ সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ মেনে চলার অনুরোধ করেন।তবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যাতে গ্রাহকদের প্রথমবার পরীক্ষার পর কোন টোকন বা প্রমাণ পত্র দেয়া যায় কিনা যাতে একই ব্যক্তিকে বারবার পরীক্ষার সম্মুখীন না হতে হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্নার আরও বলেন,সমগ্র দেশে এই নিয়ন্ত্রণ তদারকির ফলে পুলিশ প্রশাসনের “বর্ধিত নিয়ন্ত্রণ চাপ” এর জন্য স্ট্যান্ডবাই ইউনিটের পাশাপাশি বেসামরিক পোশাকে পুলিশ অফিসারদেরও নিয়োজিত করা হবে।
খুচরা খাতের জন্য, “কিভাবে নিয়ন্ত্রণগুলি নিরাপদে প্রয়োগ করা যায়” সে সম্পর্কে পদক্ষেপের জন্য সুপারিশ থাকবে।কারণ সেখানকার কর্মচারীদের সেই অনুযায়ী চ্যালেঞ্জ করা হয়, কার্নার বলেন, উদাহরণ স্বরূপ প্রমাণের জালিয়াতি শনাক্ত করার সময় বা “কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত গ্রাহকদের সাথে” আচরণ করার সময়।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১০,৮০৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ জন।অস্ট্রিয়ার করোনার টাস্ক ফোর্স ইতিমধ্যেই সরকারকে সতর্কতা দিয়েছেন যে, ওমিক্রোন ভ্যারিয়েন্টের অস্বাভাবিক বিস্তারের ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ না পড়লেও শীঘ্রই দেশের কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। কেননা শীঘ্রই অস্ট্রিয়ায় দৈনিক সংক্রমণ ২০,০০০ হাজার হলে দেশে করোনার জন্য কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে প্রায় ১৮ লাখ মানুষকে।ফলে দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ অসুস্থ থাকলে স্থবির হয়ে পড়তে পারে দেশের মূল চালিকা শক্তি। ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অস্ট্রিয়াকে পঞ্চম বারের মত লকডাউনে যেতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
আজ রাজধানী ভিয়েনায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩,৩৪০ জন। অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ১,৫৭৩ জন, Tirol রাজ্যে ১,৫১২ জন, OÖ রাজ্যে ১,৪৮৮ জন, Salzburg রাজ্যের ১,২২২ জন, Steiermark রাজ্যে ৬৫০ জন,Vorarlberg ও Kärnten রাজ্যে ৪৪১ জন করে এবং Burgenland রাজ্যে ১৩৭ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়াতে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ২,০১৩ জন এবং করোনার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন ১০,৭৩০ জন।অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন মোট ৬৩,২৭,৬২৭ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭০,৮ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩,৫০,২২৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩,৮৫৫ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ১২,৫৯,৩২৩ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৭৭,০৪৭ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২৬৪ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯৩৫ জন।বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
14,770 total views, 1 views today