ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

কবির আহমেদ, আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের অব্যাহত আশঙ্কার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সপ্তাহে ইউরোপে অতিরিক্ত ২,০০০ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছেন বলে পেন্টাগন জানিয়েছে।
এদিকে ভয়েস অফ আমেরিকা জানিয়েছে,যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সপ্তাহে নর্থ ক্যারোলাইনার ফোর্ট ব্র্যাগ থেকে প্রায় ২,০০০ হাজার সৈন্য পোল্যান্ড এবং জার্মানিতে পাঠাচ্ছেন। অন্যদিকে, জার্মানির- ঘাঁটিতে থাকা প্রায় ১,০০০ সৈন্যকে রোমানিয়াতে স্থানান্তরিত করতে যাচ্ছেন। বুধবার একজন ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এই খবর জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন , রাশিয়ান অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তিনি ইউক্রেনে আমেরিকান সৈন্য মোতায়েন করবেন না, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য সে দেশে অস্ত্র সরবরাহ করছে।এর আগে গত মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেন সংকট নিয়ে নিজের প্রথম তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যে পুতিন আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়ার উপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের অজুহাত হিসেবে সংঘাতকে ব্যবহার করা। রুশ প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, ইউরোপে ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার যে উদ্বেগ, সেটা উপেক্ষা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
মস্কোতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে আলোচনার পর পুতিন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ততটা উদ্বিগ্ন নয়, … রাশিয়ার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ইউক্রেন একটি হাতিয়ার মাত্র। ’ তারপও পুতিন আশা করেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমরা হয়তো সমাধান খুঁজে পাব, যদিও সেটা সহজ হবে না। ’
ওয়াশিংটন-ক্রেমলিন বিতণ্ডার মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, এমনটা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবার সে দেশ সফর করেন জনসন এবং পুতিনের সাথেও তাঁর ফোনালাপ হওয়ার কথা রয়েছে। ইউক্রেন সফরকালে জনসন বলেন, ইউক্রেন সীমান্তে জড়ো হয়ে থাকা রুশ সেনারা ‘স্পষ্ট ও মূর্তিমান বিপদ’।
এদিকে পুতিন-জনসন ফোনালাপের আগে এক রুশ কূটনীতিক মন্তব্য করেন যুক্তরাজ্যের কূটনীতির উপর রাশিয়ার ভরসা নেই। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার ডেপুটি রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি গতকাল বুধবার স্কাই নিউজকে বলেন, ‘কূটনীতির দরজা সবসময় খোলা। কিন্তু সত্যি বলতে কী, ব্রিটিশ কূটনীতিতে আমাদের কোনো আস্থা নেই। ’
ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রুশ সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাশিয়া সেখানে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। এ ছাড়া ট্যাংক এবং কামান থেকে শুরু করে গোলাবারুদ, বিমানশক্তি- সব কিছুর সমাবেশ করা হয়েছে। যুদ্ধাহত সেনাদের জন্য রক্তের সরবরাহও নিশ্চিত করে রেখেছে রাশিয়া, মার্কিন সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর জানিয়েছে রয়টার্স। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনের আক্রমণের পরিকল্পনা করার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ভয়েস অফ আমেরিকা আরও জানিয়েছে,বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সামরিক পদক্ষেপগুলি এখনও ঘোষণা করা হয়নি। বাইডেন সম্প্রতি বলেছিলেন যে, তিনি চুক্তির মিত্র হিসাবে আমেরিকান প্রতিশ্রুতির আশ্বাস অনুযায়ী, পূর্ব ইউরোপে নেটো মিত্রদের সুরক্ষায়, অতিরিক্ত আমেরিকান সৈন্য পাঠাতে চান।
পেন্টাগন মিত্রদের অতিরিক্ত আশ্বাস হিসাবে ইউরোপে সম্ভাব্য সৈন্য মোতায়েনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত প্রায় ৮, ৫০০ সৈন্যকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রেখেছে এবং কর্মকর্তারা সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, অতিরিক্ত ইউনিটকে শীঘ্রই সর্বোচ্চ সতর্কতায় মোতায়েন করা হতে পারে।
কূটনৈতিক পথে সমাধানের অগ্রগতি লেশমাত্র দেখা না দেওয়ায় ওয়াশিংটন এবং মস্কো ইউক্রেন নিয়ে বস্তুত সরাসরি বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। বুধবার একটি স্প্যানিশ সংবাদপত্র জানিয়েছে, মস্কো ইউক্রেনের সীমানা থেকে সরে গেলে, ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে উত্তেজনা কমাতে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তি করতে ইচ্ছুক হতে পারে।
রাশিয়া প্রতিবেশী বেলারুশসহ ইউক্রেনের সীমান্তের কাছাকাছি ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া বাহিনী, হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমান বেষ্টিত প্রায় ১ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করার পর, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের আশঙ্কা সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বেড়েছে। তবে রাশিয়ার কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে আক্রমণ করার কোন ইচ্ছা মস্কোর নেই।
14,863 total views, 1 views today