রাশিয়া দৃশ্যত পূর্ব ইউক্রেনে ব্যাপক আকারে আক্রমণ শুরু করেছে

কবির আহমেদ, ইউরোপ ডেস্কঃ ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক সপ্তাহ পূর্ব থেকেই আশঙ্কা করছিল যে,রাশিয়া খুব শীঘ্রই পূর্ব ইউক্রেনে তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ব্যাপক আকারে আক্রমণ করতে যাচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিশেষ করে ভয়েস অফ আমেরিকা জানিয়েছে ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা শুরু করেছে। একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমের শহর লেভিভে আঘাত হানলে অন্তত সাতজন নিহত হওয়ার পর এই ঘোষণা দিয়েছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি গতকাল সোমবার (১৮ এপ্রিল) এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “এখন, আমরা বলতে পারি যে, রাশিয়ার সেনারা দনবাসের জন্য যুদ্ধ শুরু করেছে, যার জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল”।
তিনি বলেন, “ ইউক্রেনের অবস্থানরত রাশিয়ান সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন এই আক্রমণে মনোনিবেশ করেছে”। দনবাস অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক, দুটি প্রদেশ যা ইতিমধ্যেই আংশিকভাবে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে রয়েছে এবং দক্ষিণে বন্দর শহর মারিউপোলও রয়েছে। অঞ্চলটি দখল করলে রাশিয়া ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের একটি স্থল করিডোর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যেটি তারা ২০১৪ সালে দখল করেছিল।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও উত্তরের অন্য অংশ থেকে রাশিয়ার তার বাহিনী প্রত্যাহার করায়, পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তাদের ভবিষ্যদ্বাণীকেই সত্য প্রমাণ করেছে যে, রাশিয়া ওই সেনাদেরকে নিয়ে পূর্ব ইউক্রেনে আবারও মোতায়েন করছে। ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লেভিভ থেকে আঞ্চলিক গভর্নর ম্যাকসিম কোজিস্টকি বলেন, তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে, অন্যটি একটি গাড়ির টায়ার মেরামতের দোকানে আঘাত করেছে।
লেভিভ ইউক্রেনের একটি প্রধান পরিবহন কেন্দ্র, যেখানে পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে, লেভিভে কোনো পশ্চিমা সহায়তায় আঘাত হানা হয়েছে। এদিকে নতুন এই গোলাবর্ষণের ঠিক আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কলে যুক্তি দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়েছে।

লেভিভে হামলা ছাড়াও, রাশিয়ার সেনারা দেশের পূর্বাঞ্চলসহ ইউক্রেনজুড়ে আরও অনেক লক্ষ্যবস্তুতে নতুন করে আঘাত হানতে শুরু করেছে। সোমবার টানা দ্বিতীয় দিনের জন্য সংঘর্ষের এলাকা থেকে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারিউপোলে, ইউক্রেনীয় বাহিনী অস্ত্র সমর্পণের জন্য রাশিয়ার দেওয়া সময়সীমাকে উপেক্ষা করে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়া মারিউপোলের অবশিষ্ট যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে যে, তারা শহুরে অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যদিও আনুমানিক ২৫০০ ইউক্রেনীয় সেনা এবং ৪০০ ভাড়াটে সেনা এখনো বিস্তৃত আজোভস্টাল ইস্পাত কারখানায় অবস্থান করছেন। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল এবিসির “এই সপ্তাহে” অনুষ্ঠানে রবিবার বলেছেন, দেশটির বাহিনী মারিউপোলে “শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে”।
মস্কো যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে পুতিনের এমন দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, শ্যামিহাল উল্লেখ করেন, বেশ কয়েকটি শহর অবরোধের মধ্যে থাকলেও শুধুমাত্র দক্ষিণে খেরসন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। রাশিয়ান আগ্রাসনের ফলে অনেক দেশকে কিয়েভে কূটনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছে। অনেকে তাদের কার্যালয় লেভিভে স্থানান্তর করেছে। ইতালি, ফ্রান্স ও চেক প্রজাতন্ত্রসহ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যে কিয়েভে তাদের দূতাবাস আবারও চালু করেছে বা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
রাশিয়া প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং সেখানে জাতীয়তাবাদীদের পরাজিত করা লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করছে। কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা বলেছে যে, এটি একটি প্ররোচনাহীন অযৌক্তিক আগ্রাসনকে ন্যায্যতা দেওয়ার মিথ্যা যুক্তি, যা ইউক্রেনের ৪ কোটি ৪০ লাখ (৪৪ মিলিয়ন) মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।
14,653 total views, 1 views today