ভিয়েনা বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের খেতাব পুনরুদ্ধার করেছে !

বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহরের তালিকায় “দি ইকোনমিস্ট”- এর বার্ষিক র্যাঙ্কিংয়ে (২০২২) অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাকে পুনরায় প্রথম স্থানে ফিরিয়ে এনেছে
ভিয়েনা থেকে কবির আহমেদ: বৃটিশ পত্রিকা দি ইন্ডিপেনডেন্ট জরিপকারী দি ইকোনমিস্ট এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গত বছরের শিরোপাধারী নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহর এই বছর ৩৪ তম স্থানে নেমে গেছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পূর্বের অগ্রগামী শহরগুলিও এই বছর অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
ইকোনমিস্টের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর হিসাবে ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার(২৩ জুন) প্রকাশিত ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েনা নিউজিল্যান্ডের শহর অকল্যান্ড থেকে শীর্ষ স্থানটি ছিনিয়ে নিয়েছে, যা করোনভাইরাস মহামারী বিধিনিষেধের কারণে বর্তমানে ৩৪ তম স্থানে নেমে গেছে।
ভিয়েনা, যা ২০২১ সালের গোড়ার দিকে ইকোনমিস্টের র্যাঙ্কিংয়ে ১২ তম স্থানে নেমে গিয়েছিল কারণ এর যাদুঘর এবং রেস্তোঁরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তারপর থেকে প্রথম স্থানে ফিরে এসেছে। ভিয়েনা বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরবর্তী উন্নয়ন খুবই দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করায় সে সহজেই ২০১৮ ও ২০১৯ সালের অবস্থায় ফিরে এসেছে।
এখানে উল্লেখ্য যে,অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা ২০১৯ সাল পর্যন্ত একটানা নয় বছর বিশ্বে মানুষ মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আসছিল।
দি ইকোনমিস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ও প্রধান শহর ভিয়েনার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভাল অবকাঠামো শহরটির বাসিন্দাদের জন্য প্রধান আকর্ষণ। তাছাড়াও ভিয়েনার ভাল স্বাস্থ্যসেবা,সংস্কৃতি,বিনোদনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে এবং সবুজায়ন শহরটিকে তার পূর্বের শিরোপা ফিরে পেতে সহযোগিতা করেছে।
এক সময়ের প্রথম স্থান অধিকারী অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরগুলির মধ্যে এই বছরও তার স্থান ধরে রেখেছে দশম স্থানে। তবে এই বছর অস্ট্রিয়ার অন্যান্য শহরগুলো প্রথম দশ থেকে ছিটকে পড়েছে। যেমন গত বছর অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড এবং পার্থ সবাই শীর্ষ দশে ছিল কিন্তু তারা এই বছর যথাক্রমে ২৭,৩০ এবং ৩২ তম স্থানে নেমে এসেছে।
দি ইনডিপেনডেন্ট আরও জানান,গত ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকে এই বছর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যখন রাশিয়ান শহর মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ “সেন্সরশিপ” এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে পড়েছিল।
বাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানের রয়েছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন। এরপরেই রয়েছে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ, কানাডার ক্যালগারি ও ভ্যানকুভার।
এদিকে ১৭২টি দেশের মধ্যে লিবিয়ার ত্রিপোলি, নাইজেরিয়ার লাগোস এবং সিরিয়ার দামেস্কের অবস্থান একেবারে শেষের দিকে। অর্থাৎ এই শহরগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অযোগ্য। তালিকার একেবারে তলানিতে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। অবশ্য তলানিতে থাকা ১০টি শহরের মধ্যে অবকাঠামোতে সবচেয়ে কম স্কোর ঢাকার—মাত্র ২৬ দশমিক ৮।
বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ৭ম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। দ্য ইকোনমিস্টের সিস্টার কোম্পানি ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ২০২২ সালের সূচকে ১৭২টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬ তম। তবে শুধু এবারই নয়, এর আগেও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ছিল ঢাকা।
তবে আগের বছরের চেয়ে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় তিন ধাপ এগিয়েছে ঢাকা। ২০২১ সালের সূচকে ১৪০টি শহরের মধ্যে ১৩৭তম হয়েছিল ঢাকা। ২০১৯ সালে ছিল ১৩৮ এবং ২০১৮ সালে ছিল ১৩৯তম স্থানে। বাসযোগ্যতার সূচকে এ বছর ঢাকার স্কোর ১০০ নম্বরে মধ্যে ৩৯ দশমিক ২। আগের বছর প্রাপ্ত স্কোর ছিল ৩৩ দশমিক ৬। ইআইইউ জানিয়েছে, মহামারিসংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার কারণে স্কোর বেড়েছে।
যে মানদণ্ডে বাসযোগ্যতার তালিকা: শহরগুলোর স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাসযোগ্যতার এ তালিকা তৈরি করে থাকে ইআইইউ। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ইআইউর এই তালিকা প্রকাশ ধাক্কা খায়।
২০২০ সালে তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পরের বছর তালিকায় শহরগুলোর অবস্থান ব্যাপক ওলটপালট হয়। কারণ, লকডাউন ও সামাজিক দূরত্বের মতো পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী শহরগুলোর সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার স্কোরকে প্রভাবিত করে।
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা থেকে যৌথভাবে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা ইউরো সমাচার পরিবার ভিয়েনা পৃথিবীর মধ্যে মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর নির্বাচিত হওয়ায় গর্ব বোধ করছে এবং ভিয়েনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
17,942 total views, 1 views today