করোনায় বিশ্ব পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের অবস্থা
নুরুল আমিন. ইউরো সমাচার প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে পাল্টে যাচ্ছে পৃথিবীর চিত্র। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। চীন দেশের উহান শহর থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভয়ংকর এই ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরু হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আর পড়েনি। যার ফলে করোনার ভয়াল থাবা বিশ্ববাসীর কাছে অত্যন্ত স্মরণীয় একটি বিষয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংদেশেও করোনা দুর্যোগ মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে একদিকে মানুষ কতটা নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর, তা যেমন লক্ষ্য করা গেছে, আবার মানুষের প্রতি মানুষ কতটা মানবিক তাও লক্ষ্য করা গেছে। কারও করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে বা করোনা সংক্রমণের খবর পেলে পরিবারের অন্যান্য সদস্য যারা আছেন, তারা নিজের জীবন বাঁচাতে মায়া-মমতার গভীর বন্ধন ছিন্ন করে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। অথচ ওই রোগীর জীবন বাঁচাতে অন্য মানুষ নিজের জীবন বাজি রেখে এগিয়ে এসেছে। মুত্যুঝুঁকির মধ্যেও মানুষ মানবধর্মের পতাকা উর্ধে তুলে ধরেছে।
আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো, সংক্রমণের ভয়ে ভীত হয়ে মানুষ আপনজনের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে, অমানবিক আচরণ করে। আসলে আতংকে বা সচেতনতার অভাবে কিছু মানুষ মানবসেবা থেকে এভাবে দূরে সরে গেছে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন। কিন্তু যখন দেখি অনেক চিকিৎসক পেশাগত দায়িত্ব বা অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে আছেন, আবার অনেক হাসপাতালে বেহাল দশা কিংবা কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুর আচরণ, তখন কী বলবো? অবশ্যই সেবার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের কথা বলবো এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ও সরকারের দৃষ্টিপাতের কথা বলবো। সবার আগে আমাদের মানবিক চেতনা জেগে উঠতে হবে। কারণ মানবসেবা পরম ধর্ম। সবাই মানবিক হতে হবে। আমরা গ্রামবাংলার মানুষ। গ্রামাঞ্চলে স্পষ্ট দেখেছি, কারও জ্বর, হাঁচি-কাশি হলে বা ঠান্ডা লাগলে তারা এখন আর ডাক্তারের কাছে যায় না। ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে যায়। গ্রামের মানুষ একে অপরের প্রতি খুব মায়াশীল।
চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে আমাদের দেশে করোনা প্রাদুর্ভাব ঘটে। দেশব্যাপী সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। করোনা আতংকের প্রধান কারণ হচ্ছে এটি একজন থেকে অন্যজনে হাঁচি-কাশি বা সংস্পর্শে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। করোনা ভাইরাস নিরাময় বা প্রতিরোধ করার মত কোন ওষুধ বা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তাই লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান করোনা চিকিৎসায় কিছু ওষুধের তথ্য দিয়েছে, যেগুলো এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে আশা করি। প্রতিরোধের উপায় হিসেবে একজন অন্যজন থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরে থাকা, মাস্ক ব্যবহার করা, নাকেমুখে হাত না দেয়া, ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলা, ঘরে থাকা, ভীড় না জমানো, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে না যাওয়া, হাতে ঘন ঘন এন্টি সেফটিক ব্যবহার করা ও সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করা ইত্যাদি নিয়ম মেনে চলতে হয়।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট রেগের নাম কোভিড-১৯। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হলেও অল্প সময়ে সুস্থ হয়। মারা গেলেও অল্প সময়ে মারা যায়। এটি সাধারণত শ্বাসতন্ত্র বা ফুসফুসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। করোনার ভয়াল থাবায় বিশ্ব পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পুরো পৃথিবী অসহায় হয়ে পড়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও লক ডাউন দেয়া হয়েছে। অঘোষিত হলেও লক ডাউন – এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কেননা সাধারণ মানুষ ঘর বন্দি। এতে বেকারত্ব বাড়ছে। মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। আয়-রোজগার কমে গেছে। দিন দিন বাড়ছে ভোগান্তি। লেখাপড়া ও ব্যবসাবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড নড়বড় হয়ে পড়ছে। এভাবে লক ডাউনে আর কতদিন থাকতে হবে? মানুষ আর লক ডাউন মানতে চায় না। লক ডাউন ব্যতীত বিকল্প উপায় সরকার খুঁজে নিতে হবে। কেননা এভাবে লাগাতার লক ডাউন চলতে থাকলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সাধারণ মানুষ আশংকা করেন। লক ডাউন শিথিল করে বিশেষ বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে ওইসব এলাকাকে রেড জোনের আওতায় এনে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনায় লক ডাউন বা রেড জোনের কারণে গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংকট বেশি।
গরীব মানুষেরা বিভিন্ন সহায়তা পেলেও মধ্যবিত্তরা আত্মসম্মান টিকিয়ে রাখতে কোন সহায়তা নিতে পারে না। সাধারণ মানুষ চায়, স্বাভাবিক চলাফেরা, ব্যবসাবাণিজ্য ও জীবনযাত্রা ঠিক রেখে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কৌশল অবলম্বন করুক। যাতে অন্তত অর্থ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ঠিক থাকে। এমন ব্যবস্থা কামনা করেন মানুষ। সবাই সচেতন হলে করোনা দুর্যোগ প্রতিরোধ সহজ হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। করোনার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। করোনা দুর্যোগে যখন পুরো বিশ্ব দিশেহারা, সেই মুহূর্তে আমাদের সরকারের সাহসী পদক্ষেপে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। ওষুধ বা ভ্যাক্সিন না আসা পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধ করে আমরা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছি। আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মহামারীকালে আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে যেতে পারি না। দুঃসময়ে একে অপরের পাশাপাশি থেকে মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের ভূমিকা রাখাই হবে আমাদের কাজ। সমুন্নত রাখতে হবে মানবতা। মানুষ মানুষের জন্য এটাই হোক আমাদের লক্ষ্য।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, কথাশিল্পী, কবি ও প্রাবন্ধিক, লালমোহন, ভোলা। nurulamin911@gmail.com, 01759648626.
6,198 total views, 1 views today